You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.11 | ত্রিপুরার উপর পাক গুলিগােলা | ত্রিপুরা - সংগ্রামের নোটবুক

ত্রিপুরার উপর পাক গুলিগােলা

আগরতলা, ২ আগস্ট- পুরান রাজবাড়ী থানার অধীন ভারতীয় গ্রাম একিনপুরের দিকে পাক সেনা গত ২৮ জুলাই রাতে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে দু’জন ভারতীয় বাসিন্দা আঘাত পান এবং ঐ গ্রামের একটি চা স্টল তৎসহ মুদির দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য বিলােনিয়া হাসপাতালে পাঠানাে হয়। পুরান রাজবাড়ী পুলিশ স্টেশনাধীন ভারতীয় গ্রাম বাতিশার দিকে পাকসেনা গত ২৮ জুলাই সন্ধ্যাবেলায় গুলিবর্ষণ করেন। এর ফলে একজন শরণার্থী আহত হন।
গত ২৯ জুলাই পাক সেনাবাহিনীর নিক্ষেপিত কয়েকটা গােলা আমাদের হরিহরদোলা গ্রামে এসে পড়ে।
আগরতলা, ৩ আগস্ট- গত ১ আগস্ট বেলা প্রায় ১০টার সময় আমাদের কাতলামারা গ্রামে পাক সেনাবাহিনীর একটি দুই ইঞ্চি মর্টার বােমা এসে পড়ে। কাতলমারা গ্রামের ভারতীয় নাগরিক সতীশ সরকার এবং আমাদের কাতলামারা শরণার্থী ক্যাম্পের দু’জন শরণার্থী আলি নিবাস এবং আবু মিঞা গােলার টুকরার আঘাত পান। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য ঈশানপুর হাসপাতালে পাঠানাে হয়েছে।
গত ১ আগস্ট বিকাল আটটায় পাক সেনাবাহিনীর একটি গােলা আমাদের হরিহরদোলা বি. ও. পি’র প্রায় ১০০ গজ পূর্বে ভারতীয় এলাকায় এসে পড়ে।
আগরতলা, ২ আগস্ট ॥ গত ৩০ জুলাই সন্ধ্যা থেকে পাক বাহিনী আমাদের পুরান রাজবাড়ী থানার রাধানগর গ্রামে গুলিবর্ষণ শুরু করে এবং ৩১ জুলাই ভাের পর্যন্ত অনবরত গুলি চালাতে থাকে। এর ফলে দু’জন শরণার্থী বুলেটে আহত হন। আহতদেরকে চিকিৎসার জন্য বিলােনিয়া হাসপাতালে পাঠানাে হয়েছে। ৩১ জুলাই বিকেল প্রায় ৫-৩০ মিনিটে পাক বাহিনী পুরান রাজবাড়ী থানার অন্তর্গত ভারতীয় গ্রাম চোত্রাখােলা ও একিনপুরের দিকে আর্টিলারির গােলাবর্ষণ শুরু করে।
গত ২৯ জুলাই বিকেল প্রায় ৪টায় পূর্ব বাংলার চাম্পারাই চা বাগান থেকে ২-৩ জন পাকিস্তানি কমলপুর থানার সােনারাই গ্রামের দিকে গুলিবর্ষণ করে। এর ফলে ভারতীয় এলাকায় গরু চরানােরত দুইজন ভারতীয় নাগরিক আহত হন। আহতদেরকে চিকিৎসার জন্য কমলপুর হাসপাতালে পাঠানাে হয়েছে।
৩১ জুলাই বেলা ১১টা থেকে ৬-৩০ মিনিট পর্যন্ত পাক বাহিনীর প্রায় ১৭টি গােলা আমাদের বিশালগড় থানার হরিহরদোলা গ্রামে এসে পড়েছে এবং তিনটি গােলা হরিহরদোলা বি. ও. পি. থেকে ১৫০ গজ পূর্বদিকে এসে পড়েছে। পাক বাহিনীর গােলা বর্ষণের ফলে একটি উদ্বাস্তু বালিকা নিহত হয়েছে এবং একজন মহিলাসহ চার জন শরণার্থী আহত হয়েছেন। আহতদেরকে চিকিৎসার জন্য কোনাবন ডিসপেন্সারিতে পাঠানাে হয়েছে।
৩১ জুলাই বেলা ১০টা থেকে ১১-৩০ মিনিট পর্যন্ত আমাদের সােনামুড়া থানার মতিনগর গ্রামে অনেক বুলেট এসে পড়েছে। এর ফলে দু’জন শরণার্থীরা মৃত্যু হয়েছে এবং মতিনগর গ্রামের ভারতীয় নাগরিক শ্রীসূর্য কুমার রুদ্রপাল বুলেটে গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন।
আগরতলা, ৫ আগস্ট, ১৯৭১ ইং: গত ২ আগস্ট বেলা প্রায় ১১-৩০ মিনিটে পাক বাহিনী পূর্ব বাংলার ধলাই এলাকা থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলি বর্ষণ করে। তাদের কয়েকটি বুলেট আমাদের কমলপুর থানার বালিগাঁও বি. ও. পি’র উপর দিয়ে চলে যায়।
২ আগস্ট রাত ৩-৩০ মিনিট নাগাদ পূর্ব বাংলার বাগান বাজার এলাকা থেকে পাক বাহিনী সাব্রুম থানার ভারতীয় গ্রাম দৌলবাড়ির দিকে গুলি বর্ষণ করে। এর ফলে শ্রীমতি মধুবালা দে মারা যান এবং নারায়ণ দেবনাথ, শচী রানী দেবনাথ ও চারু দেবনাথ আহত হন।
২ আগস্ট রাত ৩টা থেকে পরদিন (৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিশালগড় থানার হরিহরদোলা এলাকায় পাক বাহিনীর প্রায় ৩০টি গােলা এসে পড়েছে এবং ২০টি গােলা হরিহরদোলা বি. ও. পি’র প্রায় ২০০ গজ পূর্ব দিকে পড়েছে।
আগরতলা, ৬ আগস্ট: গত ৩ আগস্ট ভাের চারটা নাগাদ পাক সেনাবাহিনী যাত্রাপুর থানার বড়নারায়ণ গ্রামের দিকে আর্টিলারির গােলা বর্ষণ করে। এর ফলে আফিয়া খাতুন নামে একজন শরণার্থী মহিলা নিহত হয়েছেন।
৪ আগস্ট বেলা চারটায় পাক বাহিনী আমাদের সিধাই থানার কাতলামারা এলাকার দিকে গুলি বর্ষণ শুরু করে। এর ফলে পাতাবিল শরণার্থী শিবিরের আবাসিক আবু মিঞা নিহত হয়েছেন এবং আরাে দুইজন শরণার্থী আহত হয়েছেন। ৫ আগস্ট সকাল ৫-৪০ মিনিট থেকে ৮টা পর্যন্ত পাক বাহিনী আবার ঐ এলাকায় গুলিবর্ষণ করে এবং এর ফলে পাতাবিল শিবিরের শরণার্থী টিকেন্দ্র দাস আহত হয়েছেন। শ্ৰী দাসকে চিকিৎসার জন্য ঈশানপুর হাসপাতালে পাঠানাে হয়েছে।
৪ আগস্ট বেলা ৩-২০ মিনিট পাক বাহিনী হঠাৎ খােয়াই থানার আশারামবাড়ী বি. ও. পি’র দিকে গুলি বর্ষণ শুরু করে। ৩ আগস্ট রাত ১১-৪৫ মিনিটে পাক বাহিনী তাদের আলিনগর বি. ও. পি থেকে আমাদের রাঙ্গাউটি বি. ও. পি’র দিকে হালকা অস্ত্রের গুলি ও মটারের গুলি বর্ষণ করে। আমাদের বি. ও. পিতে তাদের বুলেট ও মর্টারের গােলা এসে পড়েছে।
আগরতলা, ৪ আগস্ট: গত ৩০ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭-৩০ মিনিট পর্যন্ত পাক বাহিনী পুরান রাজবাড়ী থানার সিদ্ধিনগর বি. ও. পি. রাধানগর গ্রামের দিকে হালকা আগ্নেয়াস্ত্রের ও তিন ইঞ্চি মর্টারের গুলি বর্ষণ করে। ৩০ জুলাই সারা রাত ধরে পূর্ব বাংলার চৌদ্দগ্রাম এলাকা থেকে পাক বাহিনী আমাদের রাধানগর বি. ও. পি’র আশেপাশে হালকা অস্ত্র থেকে গুলিবর্ষণ করে। ৩০ জুলাই রাত ১০টা থেকে দু’টা বেজে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত পাক বাহিনী ঐ একই এলাকাতে তিন ইঞ্চি মর্টারের গােলা বর্ষণ করে।
৩১ জুলাই রাতে পাক বাহিনী সাব্রুম থানার আগ্নিঘাট, সমরগঞ্জ ও শ্রীনগর বি. ও. পিতে হালকা অস্ত্রের গুলিবর্ষণ করে।
২ আগস্ট বেলা দু’টা থেকে আড়াইটার মধ্যে বিশালগড় থানার দেবীপুর বি. ও. পি’র ১৫০ গজ উত্তরে পাচটি তিন ইঞ্চি মর্টারের গােলা এসে পড়েছে। ২ আগস্ট সকাল আটটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত আমাদের বিশালগড় থানার হরিহরদোলা বি. ও. পি’র প্রায় ১৫০ গজ পূর্ব দিকে পাক বাহিনীর চারটি আর্টিলারির গােলা এসে পড়েছে।

সূত্র: ত্রিপুরা
১১ আগস্ট, ১৯৭১
২৬ শ্রাবণ, ১৩৭৮