ফারাক্কা বাঁধ চালু নিয়ে ভারতীয় মন্ত্রীর ঘােষণায় ঢাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ঢাকা: বাংলাদেশে যে সময় ফারাক্কা এবং গ্রীষ্মকালে গঙ্গানদীর পানি সরবরাহের পরিমাণ সম্পর্কে কঠোর নীরবতা পালন করছে এবং এই ব্যাপারে যৌথ নদী কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ বাতিল রয়েছে ঠিক সেই সময় ডিসেম্বর মাসে ফারাক্কা বাঁধ চালু হবে বলে ভারতীয় মন্ত্রী মি. কে সি পন্থ লােকসভায় যে বিবৃতি দিয়েছেন, তা ষড়যন্ত্রমূলক বলেই অনুমিত হচ্ছে। এই ব্যাপারে সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এই যে, যখন যৌথ নদী কমিশন ঢাকায় গ্রীষ্মকালে গঙ্গানদীর পানি সরবরাহ বৃদ্ধির সমস্যা নিয়ে আলােচনায় ব্যতিব্যস্ত ঠিক তখন মি. পন্থ বিবৃতিদানের সময় বেছে নিলেন। এই বিবৃতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে অনুরােধ করা হলে বাংলাদেশ বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিসম্পদ দফতরের একজন মুখপাত্র বলেন, বর্তমান এই নাজুক প্রশ্নে কোনাে কিছু বলার উপযুক্ত সময় এটা নয়। এই সময় যে কোনােরূপ বিবৃতি নদী কমিশনের বৈঠকের ক্ষতি করতে পারে। ইতােমধ্যে বিশস্ত সূত্রে জানা গেছে যে, বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা এই মর্মে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন যে, গ্রীষ্মকালে কি পরিমাণ পানি প্রবাহ পাওয়া যাবে সঠিকভাবে তা নির্ধারণের পরই কেবল বর্তমান গ্রীষ্মকালীন পানি প্রবাহ এবং পানি প্রবাহ বৃদ্ধির সমস্যা আলােচিত হতে পারে। পাকিস্তান থেকে প্রাপ্ত তথ্যে বাংলাদেশ জানতে পেরেছে যে, গ্রীষ্মকালীন গঙ্গানদীর পানি প্রবাহ ৫৫ হাজার কিউসেক এবং ফারাক্কার কাছে মার্চ থেকে মে মাসে এর পরিমাণ ৬০ হাজার কিউসেকে উঠানামা করে। তবে পানি প্রবাহের গড় পরিমাণ ৬৫ হাজার কিউসেক। পাকিস্তান থেকে যে হিসাব দেয়া হয় তাই সে গ্রহণ করে, কারণ এই ব্যাপারে পাকিস্তান খুব একটা আগ্রহ ছিল না। কিন্তু এটা বাংলাদেশের পক্ষে মেনে নেয়া এবং এর ভিত্তিতে আলােচনা করা অসুবিধাজনক। সুতরাং বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রয়ােজন হচ্ছে গ্রীষ্মকালে গঙ্গানদীতে কি পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয় তা সঠিকভাবে নিরূপণ করা এবং তারপর কলকাতা বন্দর ও বাংলাদেশের চাহিদা অনুসারে উক্ত হিসেবে অতিরিক্ত পানি প্রবাহ বৃদ্ধির উপায় উদ্ভাবনের জন্য আলােচনা করা হয়।১০০
রেফারেন্স: ৩০ আগস্ট ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত