You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.06.29 | ভুট্টো নীতিগতভাবেও বাংলাদেশের কোন দাবী মানতে রাজী নন | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

ভুট্টো নীতিগতভাবেও বাংলাদেশের কোন দাবী মানতে রাজী নন

ঢাকা: পাকিস্তানের একগুয়েমির দরুন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে আলােচনা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারেও কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টোর ঢাকা ত্যাগের পরপর শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে আয়ােজিত এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য প্রকাশ করেন। ড. কামাল হােসেন সাংবাদিকদের বলেন, দু’দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য পাকিস্তান একটি বিরাট সুযােগ হাতছাড়া করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জনাব ভুট্টোর সাথে আলােচনায় বঙ্গবন্ধু দুটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরােপ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার দাবীর প্রশ্নে অবিচল ছিল। কিন্তু পাকিস্তান বাংলাদেশকে তার পাওনা সম্পদের সামান্য অংশ দেবার ব্যাপারেও টালবাহানা করে। বাংলাদেশ নীতিগতভাবে বিষয়টিকে মেনে নেবার জন্য পাকিস্তানকে আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান নীতিগতভাবেও সম্পদের বাটোয়ারার প্রশ্নে রাজী হয়নি বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান ব্যাপারটিকে ধামাচাপা দেবার জন্য একটি কমিটি নিয়ােগের প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশ কমিটি নিয়ােগের প্রস্তাবকে মেনে নিয়ে আগামী ২ মাসের মধ্যে বাংলাদেশের প্রাপ্য অংশের কিয়দংশ ফিরিয়ে দেবার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান তা মেনে নেয়নি। পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের কি কি পাওনা রয়েছে এ জাতীয় একটি প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সকল স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা পাকিস্তানে তৎকালীন ষ্টেট ব্যাংকের হেড অফিসে জমা ছিল। বাংলাদেশ পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার অধিকাংশ অর্জন করতাে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করতাে পি আই এর বহুসংখ্যক বিমান এবং শিপিং কর্পোরেশনের বহু জাহাজও বাংলাদেশের প্রাপ্য বলে ড. কামাল জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য দ্বিতীয় পদক্ষেপ হচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থানরত ৪ লাখ ৪০ হাজার অবাঙালি পাকিস্তানিকে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া। তিনি বলেন, এসব লােক পাকিস্তানের প্রতি অনুগত এবং পাকিস্তানে ফিরে যেতে আগ্রহী। কিন্তু পাকিস্তান তাদের ফিরিয়ে নেবার প্রশ্নে কোন সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়নি বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পরিকল্পনা স্বীকৃতি এবং ভুট্টোর বাংলাদেশ সফরের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য বাংলাদেশ যথেষ্ট ত্যাগ করেছে। তিনি বলেন, দিল্লি বৈঠকেও ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে বাংলাদেশ উপমহাদেশের শান্তির স্বার্থে ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দিকে ছেড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ইতােপূর্বেও বাংলাদেশ ১৯৫ জন বাদে সকল যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। এতে করে সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের আন্তরিকতা কতটুকু তাই প্রমাণিত হয়। তিনি মনে করেন অপর পক্ষও যদি একই ধরনের মনােভাব পােষণ না করে তাহলে সম্পর্ক কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না। তিনি বলেন, আমরা ভবিষ্যতের স্বার্থে অতীতের শােকাবহ ঘটনাকে ভুলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের যা প্রাপ্য তা আমাদের ফিরিয়ে না দেওয়াকে কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। প্রসঙ্গত ড. কামাল হােসেন বলেন, ৭১-এর বিষাদময় স্মৃতি ভুলে গেলেও পাকিস্তান গত আড়াই বছর যাবৎ আমাদের নিজস্ব সম্পদ ভােগ করছে। তিনি বলেন, আমরা এই মুহূর্তে সমস্যার সমাধান না হলেও সমাধানের ভিত্তি রচনার জন্য পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম।
কুটনৈতিক সম্পর্ক: দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন,আমরা এই মুহূর্তে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। পাকিস্তানও একই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমাধান না হলেও সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ফলপ্রসূ হতে পারে না। বাণিজ্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একই মতাে পােষণ করেন। দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যতে আরও আলােচনা হবে কিনা সাংবাদিকদের এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তরে ড. কামাল হােসেন বলেন, আলােচনা বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাস করে যে, সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে আলােচনা করেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আলােচনায় বাংলাদেশ সম্পদের বাটোয়ারা এবং পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে পূর্বশর্ত আরােপ করেছিল বলে পাকিস্তানি পক্ষ থেকে যে অভিযােগ করা হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তা সরাসরিভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ দুটি বাংলাদেশের পূর্বশর্ত নয়। এগুলাে হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যার প্রধানত দিক। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব ভুট্টো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তা গ্রহণ করেছেন বলে ড. কামাল উল্লেখ করেন। কিন্তু সফরের কোনাে তারিখ নির্ধারিত হয়নি বলে তিনি জানান।৯২

রেফারেন্স: ২৯ জুন, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত