সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পরে সমস্যা নিয়ে আলােচনা হতে পারে: ভুট্টো
ঢাকা: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় বলেন যে, ১৯৭১ সালের তিক্ত স্মৃতি বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের উল্লেখযােগ্য উন্নতি হয়েছে। দীর্ঘ আড়াই বছরের অসংখ্য জটিল সমস্যা সমাধানের এই সফর প্রথম পদক্ষেপ বলে তিনি উল্লেখ করেন। আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে এ সব সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে যা এতদিন বন্ধুত্বের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দীর্ঘ আড়াই বছর পর দুইদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দু’দেশকে দ্বিপাক্ষিক বিষয়সমূহ আলােচনার পর জনাব ভুট্টোর এটাই প্রথমত সাংবাদিক সম্মেলন। জনাব ভুট্টো বলেন যে, কূটনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে চুক্তি সম্পাদনের জন্য জনাব শেখ মুজিবুর রহমান চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পর এসব সমস্যার আলােচনা হতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যদি সেটা করতে না চান তাহলে আমরাও তাড়াহুড়া করে তা করতে চাই না। জনাব ভুট্টো বলেন যে, তার ঢাকা আগমনের পূর্বে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তিনি আলােচনার যথেষ্ট সময় পেয়েছিলেন। তবে সব সমস্যা আলােচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, বর্তমান সফরে কোন সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানে পৌছা সম্ভব না। তিনি আরও বলেন, আমি বলতে চাই যে নীতিগতভাবে সব সমস্যারই সমাধান হয়েছে। জনাব ভুট্টো বলেন যে, পাকিস্তান ঐতিহাসিক ও ভৌগােলিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রস্তুত রয়েছে। জনাব ভুট্টো সাংবাদিকদের সাথে বলেন যে, আমরা একজাতি ভাবে বসবাস করতাম, এখন আমরা দুটি পৃথক জাতি। ১৯৭১ সালে যা ঘটেছে তা আর পরিবর্তন হবার কিছু নেই। এখন দু’দেশের জনগণ হাতে হাত মিলিয়ে দরিদ্রতার হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য সংগ্রাম করে যেতে পারি। দ্বিপাক্ষিক সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য অত্যন্ত খােলা মন নিয়ে তিনি আলােচনা করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান। পাকিস্তান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়সমূহের উপর হস্তক্ষেপ করতে চায় না এমন কি দু’দেশের জনগণের মধ্যে কোনাে ভুল বুঝাবুঝিও জিয়ে রাখতে চায় না। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এখন যে কোন দেশের সাথে তার ইচ্ছামাফিক বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। অমীমাংসিত বিষয়সমূহ সমাধানে বাংলাদেশের মনােভাব জানতে চাওয়া হলে জনাব ভুট্টো বলেন যে, সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রশ্নে কেমন করে বাংলাদেশ পূর্বশর্ত আরােপ করতে পারেন, কেন না আমিও খােলামন নিয়ে ঢাকা এসেছিলাম। ১৯৭১ সালের দুঃখপূর্ণ ঘটনার জন্য যিনি দায়ী সেই মধ্যমণিকে ক্ষমতায় রেখে কেমন করে বাংলাদেশের সাথে আলােচনায় মিলিত হওয়া যেতে পারে একজন সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ ও রাজনৈতিক ব্যাপার। এ জন্য সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ভুট্টো বলেন যে, স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আপনাদের প্রধানমন্ত্রী আমাকে আমন্ত্রণ করে এনেছেন আর আপনারা আমাকে উস্কানিমূলক প্রশ্ন করছেন। তিনি আরও বলেন যে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আপনাদের কোন প্রশ্ন করা উচিত নয়। উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পূর্বে জনাব ভুট্টো ভারতের পারমাণবিক বিস্ফোরণ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণের দাবি করেন। জনাব ভুট্টো স্বীকার করেন যে, ভারতের পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে দু’দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রশ্নে কিছু অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। চীনের পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে কিনা একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছুই বলেননি। তিনি বলেন যে, আমার একটি চিঠির মাধ্যমে ভারতের পারমাণবিক বিস্ফোরণের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর কাছে জোর প্রতিবাদ জানিয়েছি। ভারতের পারমাণবিক বিস্ফোরণ পাকিস্তানের পক্ষে হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পথে এটাই প্রধান বাধা। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে এবং আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিকতার পথে এগিয়ে যাবে। পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে বলতে গিয়ে জনাব ভুট্টো বলেন যে, শান্তির ক্ষেত্রে পারমাণবিক গবেষণা কর্মসূচি উন্নয়নের ব্যাপারে আমরা একটি সামান্য পদক্ষেপ নিয়েছি মাত্র।৯৩
রেফারেন্স: ২৯ জুন, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত