লেনিনগ্রাদ পরিদর্শনকালে ড. কামাল হােসেন
মস্কো: সােভিয়েত সরকারের আমন্ত্রণক্রমে সােভিয়েত ইউনিয়নে সফররত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন ও তার সঙ্গীগণ লেনিনগ্রাদে দুদিন কাটিয়েছেন। বন্ধুপ্রতিম দেশের এই দূতগণ মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের লীলাভূমি এই শহরটির দর্শনীয় স্থানসমূহ এবং ভ্রাদিমির ইলিচ লেনিনের জীবন ও কার্যকলাপের সাথে জড়িত বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছেন বলে বুধবার এপিএন সূত্রে জানা গেছে। লেনিনগ্রাদ কেবল তার স্থাপত্য ও বৈপ্লবিক নিদর্শনের জন্যেই বিখ্যাত নয়, এটি সােভিয়েত ইউনিয়নের শিল্প বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক অন্যতম বৃহৎ কেন্দ্রও বটে। লেনিনগ্রাদের ডেপুটি মেয়র য়েভগেনি গমােলেভ অতিথিবৃন্দকে শ্রমিকদের জনগণের প্রতিনিধিদের শহর সােভিয়েতের কাঠামাে ও এর কার্যধারা সম্পর্কে অবহিত করেন। অতিথিবৃন্দ অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে তার বক্তব্য শ্রবণ করেন। ডেপুটি মেয়র শহরের পরিবহন বিশেষত ভূগর্ভস্থ পরিবহন ব্যবস্থার সংশ্লিষ্ট প্রশ্নাদি নিয়ে আলােচনা করেন। প্রতিনিধি দলের সদস্যদের প্রশ্নের উত্তরে এফ গনলেড জোর দিয়ে বলেন যে, লেনিনগ্রাদ শহরের মহাপরিকল্পনায় একটি বড় আধুনিক শহরের উন্নয়নসম্মত জটিলতা এবং বিশেষত পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে জড়িত প্রশ্নাদির বিষয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ ৩৩০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের শােধনযন্ত্র বসানাে হয়েছে এবং কলকারখানাদির কাজ প্রায় অর্ধেক চলে গ্যাস জ্বালানির সাহায্যে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মতে লেনিনগ্রাদ নগর সােভিয়েত প্রদর্শনকালে তারা তরুণ-তরুণীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও অনাগত শ্রমিক শ্রেণির কর্মসংস্থান সম্পর্কে বহু প্রয়ােজনীয় বিষয়ে অবগত হতে পেরেছেন। ১শ টিরও বেশি রাষ্ট্রীয় বৃত্তিমূলক বিদ্যালয় প্রায় ২শ টি পেশা সম্পর্কে গ্রাজুয়েটদের প্রশিক্ষণ দান করা হবে। অতিথিবৃন্দ পিসকারীয়েট স্কোয়ে স্মৃতি সমাধিক্ষেত্র পরিদর্শন করেন। হিটলার বাহিনী কর্তৃক ৯শ দিন ধরে লেনিনগ্রাদ নগরী অবরােধকালীন যে হাজার হাজার লেনিনগ্রাদবাসী মৃত্যুবরণ করেছিলেন তাদের এই সমাধিক্ষেত্রে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। ড. কামাল হােসেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। লেনিনগ্রাদ নগরী রক্ষাকারীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্যবৃন্দ ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। সম্মানিত অতিথিদের জন্য রাখা খাতায় ড. কামাল হােসেন লেখেন, “অবরােধকালীন দুর্যোগপূর্ণ দিনগুলােতে লেনিনগ্রাদের যে বীর নাগরিকবৃন্দ মরণ বরণ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আমরা এখানে এসেছি। তাদের স্মৃতি আমাদের অন্তরে অম্লান থাকবে। বাংলাদেশের জনগণ যারা বিপুল দুঃখ দুর্দশা ভােগ করেছে তাদের প্রতি সােভিয়েত জনগণের সংহতির কারণ আমরা বুঝতে পারি। আমরা উভয় পক্ষই চিরদিন শান্তির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবাে। অতিথিবৃন্দ রুশ ও সােভিয়েত শিল্পীদের অদ্ভুত চিত্র এবং বিখ্যাতদের ভাস্করদের শিল্পকর্মসহ জাতীয় চারুশিল্পের শ্রেষ্ঠকীর্তি রুশ রাষ্ট্রীয় মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন। বিশ্বের সকল অংশ থেকে আগত প্রায় ৯ লাখ দর্শক প্রতিবছর মিউজিয়ামে আগমন করেন। বিপ্লবের কেন্দ্রীয় দফতর ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন প্রতিনিধিদের কাছে একটি স্মরণীয় ঘটনা। তারা লেনিনের মিউজিয়াম কক্ষ এবং তার প্রথম পাঠ কক্ষ পরিদর্শন করেন। যে সভা কক্ষ থেকে সােভিয়েত মূহের দ্বিতীয় নিখিল রুশ কংগ্রেস ১৯৭৩ সালে সােভিয়েত ক্ষমতা ঘােষণা করেছিল। সেই কক্ষটিও তারা পরিদর্শন করেন। একই কক্ষে শান্তি ও ভুম সংক্রান্ত লেনিনও বিক্রি ঘােষিত হয়। অতিথিবৃন্দ ঐতিহাসিক যুদ্ধজাহাজ আরােয়া পরিদর্শন করেন। অন্তবর্তীকালীন বুর্জোয়া সরকারের শেষ দুর্গ শীত প্রাসাদের পতনের সূচনা হয় এই জাহাজ থেকে সংকেত দানের মাধ্যমে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেনিনগ্রাদের ভূগর্ভস্থ রেল স্টেশনও পরিদর্শন করেন।৮০
রেফারেন্স: ২৩ মে, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত