You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.05.13 | বাংলা-ভারত শীর্ষ বৈঠকে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলা-ভারত শীর্ষ বৈঠকে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ

নয়াদিল্লি: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা বৈঠক আজ সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে শুরু হয় বলে জানা গেছে। আজকের এই পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে বঙ্গবন্ধুকে সাহায্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী খােন্দকার মােশতাক আহমদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন, পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, পরিকল্পনা কমিটি সদস্য ড. রেহমান সােবহান এবং নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব এ আর মল্লিক। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধীকে সাহায্য করেন রাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং, সেচ মন্ত্রী মি. কে সি পন্থ, বাণিজ্যমন্ত্রী মি. ডিপি চট্টোপাধ্যায়, পররাষ্ট্র সচিব মি. কেওয়াল সিং ইউনিয়ন পরিকল্পনা কমিশন প্রধান। আজকের এই দ্বিতীয় দফা বৈঠক দুপুর সাড়ে ১২ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। দ্বিতীয় দফা বৈঠকে সাধারণ ভাবে গঙ্গা নদীর পানি ব্যবহার বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আসাম ও ত্রিপুরায় ট্রানজিট সুযােগ সুবিধা দান, যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে সিমেন্ট ও সার কারখানা স্থাপনের প্রশ্ন নিয়ে আলােচনা করা হয় এবং বাণিজ্য ও দায় পরিশােধ ব্যবস্থা সমতা সাধারণ বিশ্ব পরিস্থিতিতে এবং পাট রপ্তানি সমস্যা পর্যালােচনা করা হয় বলে অনুমান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এশিয়া তথ্য উপমহাদেশে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির কল্যাণে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযােগিতার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচষ্টার প্রয়ােজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরােপ করেন। বঙ্গবন্ধু বৈঠকে আরও বলেন যে, অনুরূপ প্রচেষ্টা কেবল যে শান্তিরই সহায়ক হবে তা নয় বরং এই অঞ্চলের দুর্দশাগ্রস্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে সাহায্য করবে। বঙ্গবন্ধু উপমহাদেশের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রচেষ্টার কথাও উল্লেখ করেন বলে ওয়াকিফহাল মহল সূত্রে জানা গেছে। তিনি বৈঠকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের কথা বিস্তারিত ভাবে আলােচনা করে এই মর্মে গুরুত্ব আরােপ করেন যে, যাতে এই মৈত্ৰীতে কোনরূপ ভুল বােঝাবুঝির সৃষ্টি না হয় সে সম্পর্কে নিশ্চয়তা বিধানের প্রচেষ্টা চালানাে উচিত। তিনি দুই দেশের জনগণের কল্যাণে সকল ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযােগিতার উপর গুরুত্ব আরােপ করেন। মিসেস গান্ধীও বঙ্গবন্ধুর অভিমতের সাথে একমত প্রকাশ করেন এবং সম্প্রতি দিল্লিতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরে বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের প্রশংসনীয় অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রথম দফা আলােচনা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীদ্বয় সার্বিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযােগিতা বিশেষ করে বাণিজ্য সম্পর্কে পর্যালােচনা করেন। আজকের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের পূর্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন বলেন, দুই দেশের প্রতিনিধিদল বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে অর্থনৈতিক সহযােগিতার ব্যাপারে বিভিন্ন বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। একটি দল গত বছর স্বাক্ষরিত ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য চুক্তির সার্বিক বিষয় নিয়ে আলােচনা করবেন। এই চুক্তি অনুযায়ী দুটি দেশের একে অপরের সাথে ৬০ কোটি টাকার পণ্য বিনিময়ের কথা ছিল। প্রথম দলের নেতৃত্ব করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী খােন্দকার মােশতাক আহমদ, অধ্যাপক নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে অপর প্রতিনিধিদল অর্থনৈতিক সহযােগিতার সম্ভাবনা নিয়ে ভারতীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে আলােচনা করেন।
ভারতের পত্র-পত্রিকা: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলােচনার জন্য গতকাল নয়া দিল্লি পৌছানাের খবর আজকের ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ করা হয়। এবং বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর সাথে মিসেস গান্ধীর তিন থেকে চার কলাম আলােকচিত্র প্রকাশ করার এই খবর আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। অধিকাংশ পত্রিকা রেল ধর্মঘট সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর সফরের রিপাের্ট প্রধান খবর হিসেবে প্রকাশ করে।৪৩

রেফারেন্স: ১৩ মে, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত