শান্তির নতুন যুগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করা হয়েছে
ঢাকা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন বলেন, ত্রিপক্ষীয় দিল্লি চুক্তি সম্পন্ন করে আকাঙ্ক্ষিত ন্যায়বিচার করা হয়েছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে বাংলাদেশ এই ব্যাপারে গুরুত্ব লাভ করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে দিল্লি চুক্তি ব্যাখ্যা করে আরও বলেন যে, পাকিস্তান তার সশস্ত্র বাহিনীর অপরাধের জন্য দুঃখ নিন্দা জ্ঞাপন করেন। এতে করে অব্যাহত ভাবে আমরা যে ভূমিকা পালন করছি তারই প্রতি সমর্থন জানানাে হয়েছে। এবং উপমহাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ সম্প্রীতি ও শান্তির নবযুগ সৃষ্টির জন্যই ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দির প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, বাংলাদেশ তার মহানুভবতার জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে লাভবানের জন্য আমরা এখন আমাদের স্বার্থে এই সুনামকে কাজে লাগানাের প্রচেষ্টা চালাবাে। ড. কামাল হােসেন বলেন, ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দির বিচারসংক্রান্ত বিচারের প্রস্তাবে অন্তরালে প্রতিহিংসামূলক উদ্দেশ্য ছিল না। পাকিস্তানি সৈন্যরা যে যুদ্ধাপরাধ করেছে, তা তুলে ধরা বা প্রমাণ করাই বাংলাদেশের উদ্দেশ্য ছিল। প্রতীক হিসেবে ১৯৫ জনের বিচারের প্রশ্নটি গ্রহণ করা হয়েছিল।
ড. কামাল হােসেন জানান যে, পাকিস্তান স্বীকৃতি দিলে যুদ্ধপরাধীদের বিচার করা হবে না। এই মর্মে আশ্বাস দেয়ার জন্য লাহােরে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন চলাকালে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ তার ভূমিকায় অটল ছিল। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, স্বীকৃতির সাথে অন্য কোন বিষয়ের সম্পর্ক নেই। দিল্লি চুক্তি মােতাবেক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকেই ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দির সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ড. কামাল হােসেন গত ৩ এপ্রিল ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে যােগদানের জন্য নয়াদিল্লি যান। ৫ দিন ব্যাপী আলােচনার পর ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধুর সাথে একই বিমানে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন। এক প্রশ্নের উত্তরে ড. কামাল হােসেন বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে খুব। শীঘ্রই দ্বিপক্ষীয় আলােচনা হবে। ঋণ পরিশােধ ও দেনা পাওনা ইত্যাদি এখন পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, এই সব আমীমাংসিত বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়াই এখন বাকী আছে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এখন পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক বিষয়ে সম্পর্ক স্থাপন হবে কিনা এই মর্মে এক প্রশ্নের উত্তরে ড. কামাল হােসেন বলেন, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের ফলাফলের উপরই তা নির্ভর করছে। আর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান যে, প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবার সম্ভাবনা আছে।৩৭
রেফারেন্স: ১১ এপ্রিল, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত