দিল্লিতে বঙ্গবন্ধুর বিপুল সংবর্ধনা, হবে গুরুত্বপূর্ণ আলােচনা
নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান আগামীকাল মস্কো থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পথে সকাল ৯টায় নয়াদিল্লি এসে পৌছালে তাকে বিপুলভাবে সম্বর্ধনা জানানাে হবে। তিনি দিল্লি অবস্থানকালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে তিন দফা বৈঠকে মিলিত হবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ও তার মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে সাদর অভ্যর্থনা জানানাের জন্য বিমান বন্দরে উপস্থিত থাকবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেনও বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানানাের জন্য বিমান বন্দরে থাকবেন। ড. কামাল হােসেন ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ব্যাপারে এখন দিল্লিতেই রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পানামা বিমান বন্দরে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। বিমান বন্দরে অনুষ্ঠান শেষে তাকে রাষ্ট্রপতির ভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু দিল্লিতে একদিন অবস্থানকালে রাষ্ট্রপতি ভবনেই থাকবেন। দিল্লিতে বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর সাথে তিন দফা বৈঠক, বঙ্গবন্ধুর সম্মানে মিসেস গান্ধীর দেয়া নৈশভােজে যােগদান এবং ভারতের প্রেসিডেন্ট মি. ভি ভি গিরির সঙ্গে সাক্ষাৎকার। এদিকে বঙ্গবন্ধুকে যােগ্য সংবর্ধনা জানানাের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। সড়কগুলাে সাজানাে হচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে রাষ্ট্রপতির ভবন পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় সুদৃশ্য তােরণ ব্যানার তৈরি করা হয়েছে। ব্যানাওে লেখা রয়েছে ‘স্বাগতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী অমর হােক। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জরুরি অর্থনৈতিক বিষয়, আন্তর্জাতিক বিষয় ও ফারাক্কা বাঁধের মতাে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর সাথে আলাপআলােচনা করবেন বলে জানা গেছে। বঙ্গবন্ধুকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে অবহিত করা হবে। বঙ্গবন্ধু দিল্লি পৌছানাের পূর্বেই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষ হওয়ার কথা। ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে আলােচনা ব্যবস্থা সৃষ্টি হলে তা দূরীকরণের জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রভাব খাটানাের সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু দিল্লি এসে পৌছালে সেদিন দুপুরেই মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর সাথে প্রথম দফা আলােচনায় মিলিত হবেন। প্রথম অধিবেশন প্রায় ১ ঘণ্টা চলবে। সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফা আলােচনা শুরু হবে এবং তা প্রায় ৯০ মিনিট চলবে। বঙ্গবন্ধু ভারতের রাষ্ট্রপতি মি. ভি ভি গিরির সাথে সাক্ষাৎ করবেন। অতঃপর মিসেস ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুর সম্মানে রাষ্ট্রপতি ভবনে এক নৈশভােজ দেবেন। বঙ্গবন্ধু ১১ এপ্রিল সকাল ১১ টায় ঢাকা রওয়ানা হওয়ার পূর্বে মিসেস গান্ধীর সাথে আরেক দফা আলােচনা করবেন। উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধুর এটা দ্বিতীয় বার ভারত সফর। ইতােপূর্বে তিনি ১৯৭২ সালে ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীও এক বার বাংলাদেশ সফর করেন। সরকারি মহল বঙ্গবন্ধুর এই সফরের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর গত ২৮ মার্চ ভারত সফরের কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতার জন্য স্থগিত রাখা হয়েছিল।৩০
রেফারেন্স: ৯ এপ্রিল, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত