জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোন মহৎ সাহিত্য সৃষ্টি হতে পারে না
ঢাকা: জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনাে দিন কোনাে মহৎ সাহিত্য বা উন্নত শিল্প কর্ম সৃষ্টি হতে পারে না। বৃহস্পতিবার অপরাহ্নে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে সপ্তাহব্যাপী ১৯৭৪ এর বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধনকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপরােক্ত মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বুদ্ধিজীবী ও সুধী সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে। বলেন, আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতি যেন শুধু শহরের পাকা দালানেই আবদ্ধ না থাকে। বাংলাদেশের গ্রামান্তরের কোটি কোটি মানুষের প্রাণের স্পন্দনও প্রতিফলিত হয়। সে ব্যাপারে সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেন দেশে আর্থিক অনটন আসে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুঃসহ। অভাব আসে, কিন্তু সব কিছুর উর্ধে আমাদের মূল্যবােধের অভাবই সর্বাপেক্ষা পীড়াদায়ক হয়ে উঠছে। এই অভাব জাতীয় জীবনে যে সংকট সৃষ্টি করেছে তা অবিলম্বে রােধ করা দরকার। এই সংকট উত্তরণে এবং জাতীয় মূল্যবােধের উজ্জীবনে ও সুকুমার বৃত্তির বিকাশে দেশের সাহিত্যিক শিল্পী সংস্কৃতিসেবী শিক্ষাব্রতী ও বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন এই বাংলায় সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্য থেকে সােনার মানুষ সৃষ্টি করতে হবে। নবতর চিন্তা, চেতনা ও মূল্যবােধের মাধ্যমেই সেই নতুন মানুষ সৃষ্টি করতে হবে। বঙ্গবন্ধু সংক্ষেপে ভাষা আন্দোলনে নিজস্ব অভিজ্ঞতার একটি খণ্ড চিত্র তুলে ধরে বলেন, এই জাতীয় সম্মেলন তুলে ধরার উদ্যোগে অত্যন্ত সময়ােপযােগী হয়েছে। আমরা সাহিত্য সংস্কৃতি ঐতিহ্যের দিক থেকে দরিদ্র নয়। আমাদের ভাষার দুই হাজার বছরের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। আমাদের সাহিত্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর। আজ স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে আমাদের ভাষা, সাহিত্য সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের মর্যাদাকে দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি সাহিত্য শিল্পে এই দেশের দুঃখী মানুষের আনন্দ বেদনা, চিন্তা ভাবনা এবং সামগ্রিক অর্থে জনগণের জীবন প্রবাহকে ফুটিয়ে তােলার জন্য সাহিত্য-শিল্পের সাধকদের প্রতি অনুরােধ জানান। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন শিক্ষা ও ক্রীড়াবিষয়ক মন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী।৪৮
রেফারেন্স: ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত