You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.02.02 | বাংলাদেশ-যুগােশ্লাভিয়া যুক্ত ইশতেহার | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশ-যুগােশ্লাভিয়া যুক্ত ইশতেহার

ঢাকা: বাংলাদেশ ও যুগােশ্লাভিয়ার জোটনিরপেক্ষ রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি জোরদার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে চিন্তাধারা ও কাজের সমন্বয় বিধানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এতদুদ্দেশে এই সকল রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের আশু বৈঠক অনুষ্ঠানের ব্যাপারে এই দু’দেশ এক মতাে হয়েছে। বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট টিটো ৫ দিন ব্যাপী সরকারি সফর শেষে গতকাল শনিবার ঢাকায় প্রকাশিত এক যুক্ত ইশতেহারে বলা হয়েছে উভয় পক্ষ জোটনিরপেক্ষ নীতির প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই নীতি সারা বিশ্বের জনগণের ন্যায্য আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলনের কাজে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট টিটো ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উল্লেখ করেন যে, গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাবলী সমাধান না হওয়ায় এবং শক্তি প্রয়ােগের নীতি সার্বভৌম দেশগুলােকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়ায় বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা এখনও বিপন্ন রয়েছে। উভয় নেতা আলজিয়ার্স সম্মেলনের সিদ্ধান্ত বিশেষ করে জোটনিরপেক্ষ দেশসমূহের মধ্যে পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযােগিতা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সর্বাধিক অবদান রাখার বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতির কথা জোরের সাথে করেছেন। নিজেদের অর্থনৈতিক সহযােগিতার ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ ব্যাপকভাবে আলােচনা করেন এবং এক্ষেত্রে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। যুগােশ্লাভ প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য এবং এই লক্ষ্য মাত্রা অর্জনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী যুগােশ্লাভ সাহায্যের প্রয়ােজনীয়তার কথা অবহিত করানাে হয়েছে। ইশতেহারে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় সাহায্য দেওয়ার জন্য সম্ভাব্য সকল উপায়ে যুগােশ্লাভ সহযােগিতার আশ্বাসের কথা বলা হয়েছে। উভয় দেশের নেতাদ্বয় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ও বিস্তারিতভাবে পর্যালােচনা করেন এবং সকল ক্ষেত্রে বর্তমান। সহযােগিতার উন্নয়নে তাদের আগ্রহের কথা পুনরায় উল্লেখ করেন। দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বাণিজ্য সম্পর্কে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, উভয়ে তার পর্যালােচনা করেন এবং তাঁরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে নিয়মিত আলােচনা অনুষ্ঠানের বিষয়ে একমত রয়েছেন। ইশতেহারে বলা হয়েছে, দিল্লি চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন উপমহাদেশের দেশসমূহের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে এবং তার ফলে এই এলাকায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে বলে প্রেসিডেন্ট টিটো এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনে করেন। উপমহাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্যক্তিগতভাবে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, প্রেসিডেন্ট টিটো তার প্রশংসা করেন। এশিয়ায় এবং ব্যাপকভাবে বিশ্বের শান্তি এবং স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য বাংলাদেশ যে অবদান রেখেছে, যুগােশ্লাভ পক্ষ সন্তুষ্টির সাথে সে কথা উল্লেখ করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশকে শীঘ্রই জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। দু’নেতার সাথে আলােচনার সময় প্রেসিডেন্ট টিটো সহযােগিতা সংক্রান্ত আলােচনার পর ইউরােপের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সমঝােতার অগ্রগতি এবং এই ব্যাপারে যুগােশ্লাভিয়ার অবদানে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ইশতেহারে বলা হয়েছে উভয় পক্ষ আরব এলাকায় স্থায়ী শান্তির নিশ্চয়তা বিধানে অধিকৃত এলাকা থেকে ইসরাইলী সৈন্যের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনীদের অধিকারের নিশ্চয়তার ভিত্তিতে প্রাচ্য সংকটের আশু সমাধানের প্রয়ােজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন। ইন্দো-চীন প্রসঙ্গে তার মতাে প্রকাশ করেন, একমাত্র প্যারিস চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নই এই এলাকার শান্তি আর চিলিতে সামরিক জান্তা কর্তৃক আলেন্দে সরকারকে উৎখাত ঘটনার নিন্দা করেন। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সুসংহত করার বিষয়ে ল্যাটিন আমেরিকার দেশসমূহের সংগ্রাম সমর্থন করেন। বাংলাদেশ একটি নতুন সামাজিক রাজনৈতিক কাঠামাে গঠনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যে সাফল্য অর্জন করেছে, যুগােশ্লাভ পক্ষ তাতে গভীরভাবে সন্তুষ্ট হয়েছে।৪

রেফারেন্স: ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত