You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.01.22 | সমস্যা সমাধানে সরকার পুরােপুরি ব্যর্থ হয়েছে- আতাউর রহমান খান | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সমস্যা সমাধানে সরকার পুরােপুরি ব্যর্থ হয়েছে

সংসদ ভবন: জাতীয় সংসদে বিরােধী এবং স্বতন্ত্র সদস্যদের নেতা প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান জনাব আতাউর রহমান খান দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সমূহের সুষ্ঠু সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, জনগণের নিরঙ্কুশ সমর্থন লাভের জন্য অধিকারী বিভিন্ন দেশ হতে সর্বাত্মক সাহায্য প্রাপ্ত বর্তমান সরকার দেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। জনাব আতাউর রহমান খান জাতীয় সংসদে গত ১৫ জানুয়ারি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণের জন্য সংসদে উত্থাপিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের উপর ভাষণ দিচ্ছিলেন। উল্লেখযােগ্য যে, সংসদে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর উত্থাপিত ধন্যবাদ প্রস্তাবে ১২ টি সংশােধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। তিনি তাঁর ভাষণে অভিযােগ করেন, এখানে সেখানে দু’একটি ছােট ঘটনা ছাড়া কিছুই হচ্ছে না এই মর্মে সরকারি প্রচারণা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি দেশের প্রকৃত অবস্থা অকপটে জনগণের কাছে প্রকাশ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরাে অভিযােগ করেন যে, সরকার দু বছর পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকেও দেশের সমস্যা সমূহ সমাধানে যে সক্ষম তা জনগণের কাছে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের সুনাম বৃদ্ধি পেলে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে সুখী হবেন। তিনি অভিযােগ করেন, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বিভিন্ন কর্মপদ্ধতিতে সরকারের সফলতার কথা প্রকাশ করলেও দেশের নানাবিধ সমস্যার কথা বলেননি। জনাব খান অভিযােগ করেন যে, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বিদেশ হতে প্রাপ্ত সাহায্যের অধিকাংশই নষ্ট হয়েছে। এমনকি কোলকাতার বাজারেও জিনিসপত্র বিক্রি হয়েছে বলে তিনি সংবাদু পেয়েছেন বলে জানান। জনাব আতাউর রহমান খান অভিযােগ করেন যে, দেশে সত্যিকার গণতন্ত্র নেই। আইয়ুব আমলের ন্যায় বর্তমান সরকারও ১৪৪ ধারা জারী করে একই ভুল করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি অভিযােগ করেন, সরকার বিরােধী দলের কথা বলার গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা স্তব্ধ করেছে। তিনি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়নি বলে মন্তব্য করে বলেন, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের কর্মীদের বিশৃঙ্খলার ফলে ৭৬৮ টি ভােটকেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত রাখতে হয়েছে। জনাব আতাউর রহমান খান বিচার বিভাগকে প্রশাসন বিভাগ হতে পৃথক করার পূর্বে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার বক্তব্যকে ভাওতা বলে মন্তব্য করেন। তিনি অবিলম্বে বিচার বিভাগ প্রশাসন বিভাগ হতে পৃথক করার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা অবলম্বন করতে সরকারের কাছে দাবী জানান। তিনি রাষ্ট্রপতির ৮,৯ এবং ৫০ নম্বর আদেশের তীব্র সমালােচনা করে এগুলাে বাতিল করার দাবী জানিয়েছেন। জনাব আতাউর রহমান খান বলেন, দেশ দুর্নীতিতে ভরে গেছে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে শতগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। জনাব খান বলেন, পাকিস্তান গত ২৫ বছরে ৩ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। অথচ স্বাধীনতার কয়েক মাসের মধ্যে তার বেশি সম্পদ বিদেশে পাচার হয়েছে।’ তিনি বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তি ব্যতীত রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন। হয়ে যাবে। তিনি বলেন, জনগণের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্য মূল্যের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়, বরং কম বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি দেশের পররাষ্ট্র নীতির সমালােচনাও করেন।৮৩

রেফারেন্স: ২২ জানুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত