নারী সমাজ এগিয়ে না আসলে জাতির উন্নতি নাই: বঙ্গবন্ধু
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সােমবার জাতীয় জীবনের সর্বস্তর থেকে দুর্নীতি দমনে এগিয়ে আসার জন্য দেশের মহিলা সমাজের নিকট উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, মহিলা সমাজকে ঘরে ঘরে দুর্নীতি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। অন্যথায় দুর্নীতির মূলােৎপাটন সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধু সােমবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ মহিলা শাখার বার্ষিক সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। এ সময়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে সফররত ইয়েমেন প্রজাতন্ত্রের সহকারী প্রধানমন্ত্রী মােহাম্মদ আবদুল্লাহ ইয়াসুরিও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিপুল সংখ্যক বিদেশি প্রতিনিধি ছাড়াও মন্ত্রিসভার সদস্য, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত সভাপতি জনাব কামারুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ভাষণে মহিলা সমাজকে দুর্নীতি দমন ও অন্যান্য সামাজিক অপরাধ দমনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, একমাত্র মহিলা সমাজই এর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরােধ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন। তিনি বলেন, এদেশের মহিলা সমাজকে চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ করা যাবে না। মহিলা সমাজকে অবশ্যই আত্মত্যাগ ও শােষণহীন সমাজ গঠনে গভীর আত্মপ্রত্যয় নিয়ে দেশ পুনর্গঠনে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, মহিলারা যদি রাষ্ট্রীয় চার আদর্শের ভিত্তিতে পুরুষ সমাজের সাথে এগিয়ে আসেন তাহলে সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলা সুখী ও সমৃদ্ধিশালী সােনার বাংলায় রূপান্তরিত হবে। প্রসঙ্গত বঙ্গবন্ধু বলেন যে, দেশের জনসংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগ মহিলা সমাজের জন্য শাসনতন্ত্রে সমান সুযােগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বত্র মহিলারা পুরুষদের সমান অধিকার ভােগ করবে। বাংলাদেশের মহিলারা জাতীয় সংসদের নির্বাচনে পুরুষদের সাথে একযােগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার রাখে। চাকুরী ক্ষেত্রেও মহিলারা একই ধরনের সুযােগ সুবিধা পেয়ে থাকেন বলে বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন। এছাড়াও জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য ১৫ টি আসন বরাদ্দ রয়েছে বলে তিনি ঘােষণা করেন। চাকুরী ক্ষেত্রে খালি হয়ে যাওয়া পদের জন্য শতকরা ১০ ভাগ মহিলাদের জন্য বরাদ্দ বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। বঙ্গবন্ধু সুযােগ ও সুবিধা ভােগ করার জন্য নিজেদের উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে মহিলা সমাজের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পুনর্গঠনে আত্মনিয়ােগের জন্য মহিলাদের প্রতি আহ্বান জানান। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে মহিলাদের দৈনন্দিন জীবনে সংসার চালাতে ভীষণ অসুবিধা পােহাতে হচ্ছে। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, মূল্য বৃদ্ধি শুধু আমাদের দেশেই হয়নি। সমগ্র বিশ্বেই ব্যাপকভাবে মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। তিনি বলেন, বিশ্ববাজার থেকে বাংলাদেশকে অধিক দামে চাল ক্রয় করে দেশে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সীমিত আয় সম্পন্ন জনসাধারণকে যাতে অধিক কষ্ট সহ্য করতে না হয় সে কারণেই সরকার এ ধরনের সাবসিডি দিচ্ছেন বলে বঙ্গবন্ধু জানান।
চরিত্রবান সন্তান উপহার দেন: অনুষ্ঠানে ভাষণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, সন্তানদের চরিত্র গঠনে মায়েদের ভূমিকাই প্রধান। বঙ্গবন্ধু বলেন, সন্তানরা যাতে চরিত্রবান এবং অন্যান্য গুণের অধিকারী হয় সেসব দিকে লক্ষ্য রেখেই মহিলা সমাজকে সন্তানদের লালন পালন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু অশিক্ষা এবং কুশিক্ষার অভিশাপ থেকে দেশের কোটি কোটি মা বােনকে মুক্ত করার জন্য সারাদেশ ব্যাপী আন্দোলন গড়ে তােলার উপরও গুরুত্ব আরােপ করেন।৭৬
রেফারেন্স: ২১ জানুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত