সাংবদিক সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রীর আমদানি নীতি ব্যাখ্যা
ঢাকা: বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান বুধবার বলেছেন, চলতি আমদানি নীতিতে ৩২৩ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকার যে আমদানি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে যে কোন ভাবেই হােক সে লক্ষ্য অর্জন করা হবে। তিনি আরাে বলেন, প্রত্যেকটি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য বাস্তব কর্মপন্থা গ্রহণ করা হবে। জনাব কামারুজ্জামান বুধবার বাংলাদেশ সচিবলায়ে পরিকল্পনা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন। তিনি আমদানি খাতে অর্থ যােগান প্রসঙ্গে বলেন, আমদানি লক্ষ্যের মধ্যে ১০৪ কোটি টাকা ঋণের মাধ্যমে মেটানাে হবে। বিনিময়ে বাণিজ্যের পরিমাণ ২৮ কোটি টাকা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাকি ১৯১ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা আমাদের নিজেদের তহবিল থেকে আসবে বলে বাণিজ্যমন্ত্রী ঘােষণা করেন। এর মধ্যে যদি কোনাে খাতে ঘাটতি দেখা দেয় স্বল্প মেয়াদী ঋণের মাধ্যমে পূরণ করা হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। জনাব কামারুজ্জামান বলেন, চলতি জাহাজী মওসুমে আমদানি লক্ষ্যের মধ্যে ২৫৭ কোটি টাকা সরকারি খাতে ব্যয় হবে। এর মধ্যে টিসিবির ৬৫ কোটি টাকার শাড়ি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে তিনি জানান। বাকী ৬৬ কোটি টাকা বেসরকারি খাতে ব্যয় হবে। তিনি বলেন, আপত দৃষ্টিতে গত বছরের আমদানি নীতির তুলনায় এবারের আমদানি নীতিতে এই ১০০ কোটি বেশি মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তার পরিমাণ দাঁড়াবে ৬০-৭০ কোটি টাকা। বিশ্ব বাজারে কতিপয় দ্রব্যের মূল্যের উধ্বর্গতিই এর কারণ বলে তিনি জানান। বাণিজ্যমন্ত্রী প্রকাশ করেন যে, সেক্টর কর্পোরেশনগুলাে যাতে তাদের প্রয়ােজনমতাে বিনা লাইসেন্সেই জিনিসপত্র আমদানি করতে পারে সরকার সেজন্য পৃথক বরাদ্দ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পরীক্ষা করে দেখছে। তিনি বলেন, উৎপাদন ব্যবস্থার খাতে অবাঞ্ছিত বাধা না পরে সেজন্য এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি বিশেষ ঘােষণা প্রচার করবে বলেও তিনি জানান। বিদেশে অবস্থানরত বাঙালিদের ব্যক্তিগত আয়ের উপর আমদানির যে বিধান রয়েছে তা আগের মতােই চালু থাকবে বলে তিনি জানান। চলতি আমদানি নীতির বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে যেয়ে জনাব জামান বলেন, সরকার একটি উৎপাদন ভিত্তিক আমদানি নীতি চায়। শিল্প উৎপাদন অব্যাহত এবং বৃদ্ধি বর্তমান আমদানি সহায়ক হবে বলে তিনি ঘােষণা করেন। তিনি চলতি জাহাজী মওসুমে অধিক তুলা এবং সুতা আমদানির বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দেশের মােট চাহিদা এবং উৎপাদনের মধ্যকার ঘাটতি মেটানাের জন্যই কেবল বস্ত্র আমদানি করা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, দেশ আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই বস্ত্র উৎপাদনে স্বংয়সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। অবশ্য সাথে সাথে বস্ত্র শিল্প প্রসারের উপর তিনি গুরুত্ব আরােপ করেন। মন্ত্রী আরাে বলেন, চলতি নীতিতে বিলাদ্রব্য আমদানির চাইতে নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদির আমদানির উপরই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে সেই ১০৮টি দ্রব্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে তিনি জানান। এর মধ্যে অটোরিকশা, রাসায়নিক দ্রব্যাদি, চিকিৎসা সামগ্রী, মেরিন ডিজেল ইঞ্জিন, সাগুদানা ও বিজ্ঞান সামগ্রী। তিনি বলেন, টিসিবিকে বিদেশি সিগারেট আমদানির জন্য পাঁচ লাখ টাকার একক আমদানি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এর উপর শতকরা ৪০০ ভাগ আমদানির শুল্ক ধার্য করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।৯
রেফারেন্স: ২ জানুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত