উপকূলে গর্কি প্রতিরােধ বাঁধ নির্মাণের মহাপরিকল্পনা
ঢাকা: সরকার পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত থেকে সুন্দরবন বরাবর বরিশাল জেলার ভােলা পর্যন্ত প্রায় দুই শত মাইল দীর্ঘ ও ২৫-৩০ ফুট উঁচু একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণের কাজ হাতে নেবার ব্যাপারে গভীরভাবে বিবেচনা করছে। এই বিরাট পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য আনুমানিক প্রায় ৮শত কোটি টাকা ব্যয় হবে। পানি উন্নয়ন বাের্ডের একটি শীর্ষ স্থানীয় মহল ঢাকায় জানান যে, সরকার বর্তমানে এই প্রকল্পের বিভিন্ন দিক গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। উপকূলীয় এলাকায় গভীর অভ্যন্তরে সামুদ্রিক জলােচ্ছাস প্রতিরােধের জন্য অনুরূপ একটি উঁচু বাঁধ নির্মাণের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। গত ১২ বছরে যে ২শত মাইল বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট ২০-২৫ ফুট উচু ভয়াবহ জলােচ্ছাস ঠেকাতে মােটেই পর্যাপ্ত নয়। এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় বার বার বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে আঘাত হেনে চলেছে। ১শত ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৭-৮ ফুট উঁচু এই বাঁধটি সমাপ্ত হলে স্বাভাবিক জোয়ারের ফলে লবণাক্ত পানির হাত থেকে উপকূলীয় এলাকাকে রক্ষা করা সম্ভব। কিছু সামুদ্রিক জলােচ্ছ্বাস প্রতিরােধে এটা মােটেই উপযুক্ত নয়।
বাঁধের বিভিন্ন দিক: প্রস্তাবিত এই বহুমুখী উপকূলীয় বাঁধটিতে পানি নিষ্কাশন ও ‘শিপ লক’–এর কাঠামােতে নির্মিত হবে যাতে করে নিরাপদ উচ্চতার উপর দিয়ে ৯০ কোটি বর্গফুট পানি সরিয়ে দেয়া যায়। ফলে সামুদ্রিক জলােচ্ছাসের ক্ষতি ও প্রলয়ের আশংকা বিদূরিত হবে এবং বহু উঁচু সামুদ্রিক বান বাঁধের সর্বোচ্চ সীমায় আঘাত হানতে পারবে না। এ ছাড়া এই বাঁধ নির্মাণের ফলে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করতে পারবে না এবং বছরের সর্বক্ষণ পানির প্রবাহ অক্ষুন্ন থাকবে, ফলে গ্রীষ্মকালে নৌ-চলাচলের সুবিধা হবে। এই বাঁধের অপর একটি উল্লেখযােগ্য দিক হচ্ছে গ্রীষ্মকালের মার্চ ও এপ্রিল মাসে সেচের জন্য পানি সরবরাহ করতে পারবে। এই বহুমুখী পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে জাতি নানাভাবে লাভবান হবে। বাঁধটি নির্মিত হলে বন্যার তেজ কমাতে তথা বন্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। পানিবিশেজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের জন্য স্বল্পমেয়াদী না বরং দীর্ঘমেয়াদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার প্রয়ােজন। বার বার বন্যাজনিত সমস্যার কোনাে স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব নয়। কারণ তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এর দ্বারা কেবল সাময়িকভাবে বন্যার ধ্বংসলীলা বন্ধ করা যেতে পারে।৪
রেফারেন্স: ১ জানুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত