মেহেরপুরের চার পাশে মুক্তিফৌজ/মুক্তাঞ্চলে অসামরিক শাসন
মুজিবনগর, ৯ নভেম্বর-মুক্তিবাহিনী তিন দিক থেকে অভিযান চালিয়ে মেহেরপুর শহর সহ আশপাশ এলাকা অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। এ ছাড়া কুষ্টিয়া জেলার পাঁচশ বর্গমাইল এখন মুক্তাঞ্চল । সেখানে অসামরিক শাসন চালু হয়েছে। মুক্তিযােদ্ধাদের ত্রিমুখী অভিযানে বামনদিঘাটি থেকে পাকিস্তানী বাহিনী বিতাড়িত। সেখান থেকে তারা খুলশাকুন্ডিতে হটে গিয়েছে মেহেরপুরে অবস্থিত পাক সেনাদল আটক হয়ে পড়েছে এবং মূল ঘাটি মীরপুরে। থেকে তারা এখন বিচ্ছিন্ন। গানগানি থানার উত্তর-পশ্চিম থেকে মাথাভাঙ্গা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়া তারা ভৈরব নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে দর্শনা-মেহেরপুর রােডের উত্তর পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে।গেরিলা আক্রমণ যশােরের সব থানা ক্ষতিগ্রস্ত মুক্তিযােদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে যশাের জেলার প্রায় সব থানাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাতক্ষীরায় দক্ষিণে হরিনাগ অঞ্চলে মুক্তিযােদ্ধারা বহুদূরে ঢুকে পাক বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। তাদের গতিবিধির রােধের জন্য সেখানে সম্প্রতি একটি পাক জঙ্গী বিমান চক্কর মেরে আসে। অসামরিক প্রশাসন চালু। অন্যদিকে কুষ্টিয়া জেলার আটশ’ বর্গ কিলােমিটার অঞ্চলে অসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখনকার ১৭টি সীমান্ত ঘাঁটিও পাকবাহিনীর হাতছাড়া। জাতীয় পরিষদের আওয়ামী লীগ সদস্য শ্রীসাইউদ্দিন জানান, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা প্রভৃতি এলাকার মুক্তাঞ্চলে এই শাসন চালু হয়েছে। মুক্তাঞ্চলের তেঁতুলবেড়িয়া প্রশাসনিক দফতরে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এই তথ্য জানান। মুক্তিবাহিনী এখানে মেহেরপুরে মহকুমার সাতটি ইউনিয়নের পঞ্চাশটি গ্রাম মুক্ত করেছে। বাংলাদেশ সরকার সেখানে পনেরটি খাজনা আদায় অফিস বসিয়েছেন। জনসাধারণ সেখানে স্বেচ্ছায় খাজনা দিচ্ছেন। চিকিৎসার ব্যবস্থা ও অন্যান্য ত্রাণ ব্যবস্থা সেখানে নেওয়া হয়েছে।এ ছাড়া কৃষকরা নিজেদের জমিতে চাষবাস শুরু করেছেন। সমস্ত স্তরের জনসাধারণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সহযােগিতা করছেন।
আওয়ামি লীগের আর একজন জাতীয় পরিষদ সদস্য শ্রীইউনুস বলেন, চুয়াডাঙ্গা মহকুমার পাঁচটি ইউনিয়ন ও কুষ্টিয়া সদর মহকুমার দুটি ইউনিয়ন এলাকার পাঁচত্তরটি গ্রাম মুক্ত হয়েছে এবং সেখানে অসামরিক শাসন চালু হয়েছে। ওই সব এলাকার জাতীয় পতাকা উড়ছে ।
Reference: ৯ নভেম্বর ১৯৭১, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা