ভাসানী কর্তৃক সশস্ত্র তৎপরতা সমর্থন
বাংলাদেশ ন্যাপের ভাসানী প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেছেন, বাংলাদেশে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের ‘স্কোপ’ নেই। সশস্ত্র বিপ্লব ছাড়া উপায় নাই। আমার বয়স থাকলে আমি নিজেই সশস্ত্র বিপ্লব করতাম। মওলানা ভাসানী পল্টন ময়দানে ভা-ন্যাপের উদ্যোগে আয়ােজিত জনসভায় ভাষণ দানকালে উপরােক্ত মন্তব্য করেন। মওলানা সাহেব বলেন, “যারা সশস্ত্র বিপ্লব করবে আমি তাদের দোয়া করি আল্লাহ তাদের জয় করাে।” তার দোয়াই ফল হয়। ভা-ন্যাপের প্রধান বলেন, দেশের আন্দোলনের পথ হরতাল, মিছিল ব্যর্থ হলে তিনি আন্দোলনের প্রসেস বদলে দিবেন। তিনি বলেন, তারপর কামানের বদলে কামান, বন্দুকের বদলে বন্দুক। মওলানা ভাসানী বলেন, থানা লুট হচ্ছে এখনাে। রক্ষী বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ হয় নাই হবে, তখন মুজিব কি করবা? তিনি আরাে বলেন, “রক্ষী বাহিনী কিছুদিন সবুর করাে”। এ প্রসঙ্গে মওলানা সাহেব বলেন, যেনে রেখ মুজিব, বাংলাদেশে এরা নক্সালী নয় —এরা বাংলার বীর সেনানী। তারা নিজেদেরকে নক্সাল বলতে ঘৃণা করে।” তিনি আরাে বলেন, “হিন্দুস্থানের পশ্চিম বঙ্গে এদের দমন করা যেতে পারে কিন্তু বাংলার মাটিতে হবে না”।
১৬ ডিসেম্বর : ভা-ন্যাপ প্রধান ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস সম্পর্কে বলেন, “১৬ ডিসেম্বর আন্দোলনের দিন নয়, কাঁদবার দিন।” তিনি আরাে বলেন, যতদিন দিল্লির, রাশিয়ার, আমেরিকার গােলামির জিঞ্জির ছিড়তে পারবাে না ততদিন ১৬ ডিসেম্বর বাংলার বুকে আমােদ-আহ্লাদ করবাে না।” মওলানা ভাসানী বলেন, জনগণ দুষ্কৃতিকারী দমন করতে পারবে। মুজিব তােমার বিডিআর রক্ষী বাহিনী পারবে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সমিতি সুতা চুরি করে, রিলিফের মাল হিন্দুস্থানে। পাচার করে, হিন্দুস্থানে মাড়োয়ারীদের সহায়তায় লক্ষ লক্ষ মণ ধান হিন্দুস্থানে পাচার করে। মওলানা ভাসানী অভিযােগ করেন, সারাদেশে রক্ষী বাহিনীর নির্যাতন চলছে। বিরােধী দলীয় কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। মা জাতির উপর নির্যাতন চলছে। তিনি বলেন, জনগণ এর বিচার করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “মুজিব প্রস্তুত হও, তােমাকেও ক্যান্টনমেন্টে যেতে হবে।” এক পর্যায়ে মওলানা সাহেব অভিযােগ করেন, পাবনার মতিনের ভাগ্নির উপরে রক্ষীবাহিনী বলাৎকার করেছে।
ড. রাজী : ভা-ন্যাপের চেয়ারম্যান ড. রাজী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির দাবি শাসনতন্ত্র থেকে কলাবরেটার আইন ছিড়ে ফেলুন। তা না হলে ন্যাপ একদিন শাসনতন্ত্র থেকে কলাবরেটর আইন ছিড়ে টুকরাে টুকরাে করে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিবে। তিনি অভিযােগ করেন, রক্ষীবাহিনী মন্ত্রী, এমপি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের রক্ষা করার জন্য পাহারা দিচ্ছে।৩৮
রেফারেন্স: ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ