অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে বাংলাদেশ-জাপান মতৈক্য
বাংলাদেশ ও জাপান বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্প্রসারণে মতৈক্য হয়েছে। জাপানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপ্তাহব্যাপী সরকারি সফর শেষে বুধবার ঢাকা ও টোকিও থেকে একযােগে প্রকাশিত এক যুক্ত ইশতেহারে এই কথা বলা হয়। ইস্তেহারে বলা হয় যে, বঙ্গবন্ধু জাপানের প্রধানমন্ত্রী মি. তানাকার মধ্যে খেলাধুলা ও ফলপ্রসূ আলাপ-আলােচনার ফলে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উভয় দেশের সহযােগিতা সম্প্রসারণে সহায়ক হবে। ইশতেহারে বলা হয় যে, জাপান বাংলাদেশকে ৯’শ কোটি ইয়েন (২৪ কোটি টাকা) মূল্যের পণ্য ঋণ দেবে। এই ঋণ অত্যন্ত সহজ শর্তে দেয়া হবে। ইতােপূর্বে জাপান এত সহজ শর্তে আর কোনাে উন্নয়নকামী দেশকে ঋণ প্রদান করেনি। এই ঋণের ব্যাপারে বিস্তারিত সব কিছু নির্ধারণ ও প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উভয় দেশের কর্মকর্তাগণ খুব শীঘ্রই আলােচনায় বসবেন। ইশতেহারে আরও বলা হয় যে, জাপানি সাহায্যে নির্মাণাধীন প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়ােজনীয় অতিরিক্ত অর্থের ব্যাপারে জাপানের সহযােগিতা করার প্রশ্নে উভয় দেশের কর্মকর্তাগণ অচিরেই আলােচনায় মিলিত হবেন। উভয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এশিয়ার শান্তি বজায় রাখা এবং উন্নয়নমূলক কর্মতৎপরতা বৃদ্ধির জন্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জোট নিরপেক্ষ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতিতে অবিচল থাকা এবং বিশ্বের সকল দেশের মৈত্রী কামনার কথা পুনরায় উল্লেখ করেছেন। এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, সার্বভৌম ও সমতার ভিত্তিতে অপরের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা এবং পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়ভাবে বিশ্বের সকল দেশের সাথে মৈত্রী স্থাপনে আগ্রহী। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উভয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব পরিস্থিতিতে পারস্পরিক সহযােগিতার আহ্বান জানান এবং এই ক্ষেত্রে সহযােগিতার লক্ষণকে অভিনন্দন জানান। মন্ত্রীর নিকট বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রস্তাবিত যমুনা সেতুর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন এবং এই ব্যাপারে উভয় প্রধানমন্ত্রী জাপানি বিশেষজ্ঞদের সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশকে সময়মতাে চাউল সরবরাহ করার জন্য বঙ্গবন্ধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ইস্তেহারে জাপানের প্রধানমন্ত্রী মি. তানাকা বিদেশ থেকে বাংলাদেশের চাউল সরবরাহের বিষয় বিবেচনা এবং বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে সহযােগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর গতিশীল নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং উপমহাদেশের মানবীয় সমস্যাবলি সমাধানে সহায়ক হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী মি. তানাকা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওহিরাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং মি. তানাকা এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।৭৭
রেফারেন্স: ২৪ অক্টোবর ১৯৭৩, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ