মিসর ও সিরিয়ার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন
শনিবার জাতীয় সংসদে সদস্যদের তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে মিসর ও সিরিয়া কর্তৃক বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দানের ঘােষণা প্রকাশ করেন। জাতীয় সংসদের শারদীয় অধিবেশনের উদ্বোধনীর শুরুতেই ড. কামাল হােসেন দণ্ডায়মান হয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুখবর দেয়ার জন্য স্পিকারের অনুমতি প্রার্থনা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও সংসদে উপস্থিত ছিলেন। তাকে অত্যন্ত তৃপ্ত ও প্রফুল্ল দেখাচ্ছিল। ড. হােসেন মধ্য প্রাচ্যের নেতৃস্থানীয় আরব দেশ মিসর ও সিরিয়া কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের সরকারি ঘােষণা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুসহ প্রত্যেকেই করতালি ও টেবিল চাপড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের সরকার তারযােগে কিছুক্ষণ আগে আমাদের সরকারিভাবে এ খবর জানিয়েছেন। জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হয় বিকাল তিনটায়। মে এবং জুন মাসের দিকে বঙ্গবন্ধুর একজন বিশেষ দূত জনাব আতাউর রহমান উপমহাদেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা এবং বাংলাদেশের স্বীকৃতি দান সম্পর্কে আলাপ আলােচনার জন্য মিসর ও সিরিয়াসহ বহুসংখ্যক আরব দেশ সফর করেন। সফরকালে মিশর ও সিরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের নিকট বঙ্গবন্ধুর বিশেষ বার্তা প্রদান হ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর বিশেষ দূতের কাছে দুই রাষ্ট্র প্রধান আলােচনাকালে অতিশীঘ্রই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের কথা জানিয়েছেন। মিসরের প্রেসিডেন্ট আনােয়ার সাদাত বাংলাদেশ দূতের সাথে আলােচনাকালে বঙ্গবন্ধুকে ‘আমার প্রিয় ভ্রাতা মুজিব’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। তারপর এই মাসের। প্রথম সপ্তাহের শেষে দিকে আনুষ্ঠিত আলজিয়ার্স জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সাথে অন্যান্য। রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়াও বিশিষ্ট আরব রাষ্ট্রনায়কদের সাথে আন্তরিক পরিবেশে আলাপ আলােচনা হয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আরব রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে মুখােমুখি আলাপ আলােচনার ফলে আরব। রাষ্ট্রপ্রধানরা বাংলাদেশের বাস্তবতা যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। বঙ্গবন্ধু আলজিয়ার্সে অন্যান্যদের মধ্যে মিসর ও সিরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে আলােচনায় মিলিত হয়েছেন। মিসরের সাথে আমাদের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত না হলেও দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। মিসর ও আরব দেশের দুই হাজার প্রতিনিধি রয়েছে। তাদের কূটনৈতিক পরিভাষায় মিশন প্রধান বলা হয়ে থাকে। মিশরের বাংলাদেশের মিশন প্রধান জনাব আতাউর রহমান রাষ্ট্রদূত হবেন। বাংলাদেশে মিশরের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হয়েছেন জনাব হে গাজী। তিনি নতুন দায়িত্ব গ্রহণের জন্য শীঘ্রই ঢাকা আসছেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে আলজিয়ার্সে সিরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান হাফিজ আল আসাদের আলােচনার সময় তিনি (সিরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান) বাংলাদেশকে অতিশীঘ্রই শুধু স্বীকৃতি নয় বঙ্গবন্ধুকে সিরিয়া সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মিসর ও সিরিয়ার আগে মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক, দক্ষিণ ইয়েমেন ও লেবানন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের বিশ্বাস, অল্প কয়েকদিনের মধ্যে আরাে কয়েকটি আরব দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে পারে।৫১
রেফারেন্স: ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ