আন্তর্জাতিক রেডক্রসের উদ্যোগে ১২৭ জনের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
পাকিস্তান কর্তৃক মুক্তি দেয়া ৪৫০ জন আটক বাঙালির ২২৭ জনের প্রথম দলটি জাতিসংঘের ভাড়া। করা আফগান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানযােগে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন। ঢাকা পৌঁছে তারা সাংবাদিকদের জানান যে, পাকিস্তানে আটক বাঙালিরা অবর্ণনীয় এবং দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। স্বদেশে প্রত্যাগত বাঙালিরা স্বাধীন মুক্ত বাংলার মাটিতে পা ফেলে অভিভূত হয়ে পড়েন। তারা বলেন, করাচী এবং এর আশে পাশে বন্দি শিবিরে বসবাসকারী বাঙালিরা খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্রের অভাবে চরম কষ্টে দিন যাপন করেন। তারা বলেন, আন্তর্জাতিক রেডক্রস সংস্থা যদিও আটক বাঙালিদের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করছে কিন্তু তা প্রয়ােজনের তুলনায় অতি নগণ্য। ১২৭ জন স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকারীদের মধ্যে ৭টি শিশু এবং এগার জন মহিলা রয়েছেন। আফগান এয়ারলাইন্সের বিমানটি করাচী থেকে রওয়ানা হয়ে বেলা একটার সময় ঢাকা বিমান বন্দরে অবতরণ করে। আন্তর্জাতিক রেডক্রসের উদ্যোগে দু’দেশের নাগরিকদের এই বিনিময় চলছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে, কয়েকদিন আগে বাংলাদেশও, সমসংখ্যক পাকিস্তানিকে সে দেশে ফিরে যেতে অনুমতি প্রদান করে। স্বদেশ প্রত্যাগত বাঙালিদের ঢাকা বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব কোরবান আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ রেডক্রসের চেয়ারম্যান গাজী গােলাম মােস্তফা, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আমজাদ হােসেন এবং অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। বিমানবন্দরে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘ ত্রাণ অধিকর্তা মি. লােকাস্টিও এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রস সংস্থার কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। আত্মীয়-স্বজনদের প্রত্যাবর্তনের সংবাদ পেয়ে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বিমানবন্দরে উপস্থিত হন।
বিমানবন্দরে মর্মস্পর্শী দৃশ্য : প্রত্যাগতরা বিমান থেকে যখন অবতরণ করছিলেন তখন মর্মস্পর্শী দৃশ্যের অবতারণা হয়। মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তনের আনন্দে অনেকের চোখ বেয়েই তখন আনন্দ অশ্রু ঝরছিল। অনেকেই দীর্ঘকাল পর আত্মীয়স্বজনদের দেখে ফুপিয়ে কেঁদে ফেলেন। বিমান থেকে নামবার পর প্রত্যাগত শিশুদের অত্যন্ত উৎফুল্ল মনে হচ্ছিল। শিশুরা অবাক বিস্ময়ে বিমান বন্দরে সমাগত জনতাকে অবলােকন করছিল।
আজ আরও তিনটি দল প্রত্যাবর্তন করবে : আজ আরও তিনটি ফ্লাইটে মুক্তিপ্রাপ্ত বাঙালিদের বাকি লােকজন ঢাকা ফিরে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আজকের প্রথম ফ্লাইটটি ভাের তিনটা, দ্বিতীয় ফ্লাইটটি দুপুর দেড়টা এবং তৃতীয় ফ্লাইটটি রাত ১২ টায় ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করবে। মুক্তিপ্রাপ্ত ৪৬৪ জনের মধ্যে ৩৮৬ হচ্ছেন নাবিক এবং তাদের পরিবার, ১৭ জন ছাত্র মানবিক কারণে মুক্তিপ্রাপ্ত আরাে ৪৬ জন এবং ১৫ জন অসুস্থ বাঙালি। প্রত্যাগত প্রথম দলটির সকলকে মােহাম্মদপুর ত্রাণকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই ত্রাণ কেন্দ্রটি ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় দেখাশােনা করবে। ঘরে ফেরা না পর্যন্ত ত্রাণ শিবিরেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।৪১
রেফারেন্স: ১১ জুলাই ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ