You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.07.07 | ভারতের সাথে বন্ধুত্বের প্রশ্নে সংসদে তাজউদ্দীনের ঘােষণা | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

ভারতের সাথে বন্ধুত্বের প্রশ্নে সংসদে তাজউদ্দীনের ঘােষণা

অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ জাতীয় সংসদে বলেন যে, বাংলাদেশ কোনােদিনই কারাে বশ্যতা মেনে নেয় নাই এবং ভবিষ্যতেও কখনও কারাে বশ্যতা মেনে নেবে না। তিনি বলেন, স্বাধীন জাতি হিসাবে বিশ্বের দরবারে চিরকালই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব আবেগের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়- দুটি দেশ একই আদর্শে বিশ্বাসী এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কায়েম করতে চায়। অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ১৯৭৩-৭৪ সালের সাধারণ বাজেটের দায়মুক্ত ব্যয় সম্পর্কিত মঞ্জুরি দাবি ও নির্দিষ্টকরণ সম্পর্কে আলােচনার সমাপ্তি ভাষণ দিচ্ছিলেন। জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে সব বন্ধুরাষ্ট্র আমাদের দুর্দিনে। প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে সাহায্য এবং সহযােগিতা দান করেছে তাদের প্রতি কটাক্ষ করার কোনাে অধিকার কারাে নাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের স্বার্থে জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকটি দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। আর তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলাে মাত্র কিছুদিনের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ১০০টি রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বৈদেশিক সাহায্য : অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তােলার জন্য বৈদেশিক সাহায্য আমরা গ্রহণ করবাে তবেই অর্থনৈতিক কাঠামাে অবশ্যই সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির সাথে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকবে। তিনি বলেন, এখনাে আমরা সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব সম্পদ দিয়ে জাতীয় উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্ষম হই নাই। ফলে দেশ ও জনগণের স্বার্থে জাতীয় উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার জন্য বৈদেশিক সাহায্য বা ঋণের প্রয়ােজন রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা পূরণের জন্য স্বাধীনতার পর পরই বাংলাদেশকে ৯ কোটি ৪৮ লাখ পাউন্ড স্টার্লিং ঋণ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, এই টাকার সুদ হিসাবে পরিশােধ করার জন্য ২৩ লাখ টাকার দায়মুক্ত ব্যয়ের দাবি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এছাড়া ৫ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণের সুদ এবং ঋণ পরিশােধ করার জন্য দায়মুক্ত ব্যয়ের দাবি করা হয়েছে। তিনি বলেন, উপরােক্ত ঋণের টাকা জাতীয় উন্নয়ন ক্ষেত্রে ব্যয় করার জন্যই বিদেশে হতে ঋণ নেয়া হয়েছিল। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ এবং জনগণের কাছ হতে সরকারের আভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তিনি বলেন, ৩ কোটি ৫০ লাখ ৬২ হাজার টাকা সুদ পরিশােধের জন্য দায়মুক্ত ব্যয় সম্পর্কিত মঞ্জুরি দাবিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ জোর দিয়ে বলেন, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কায়েমই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। তিনি বলেন, দেশের সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কায়েমের জন্য জাতীয় সাধারণ বাজেট পথ রচনা করবে। তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এই লক্ষ্যে পৌছার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরােপ করে জনাব তাজউদ্দীন বলেন, তবে সরকারকে অন্যান্য বিভাগের প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ একটি মন্ত্রণালয় আর একটি মন্ত্রণালয় হতে বিচ্ছিন্ন নয়। বরং একটি অপরটির পরিপূরক। তিনি বলেন, সবদিক বিবেচনা করেই জাতীয় পরিকল্পনা এবং বাজেট প্রণয়ন করা হয়। তিনি বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।২৫

রেফারেন্স: ৭ জুলাই ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ