You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.06.014 | উন্নয়নমুখী প্রথম জাতীয় বাজেট | দৈনিক পূর্বদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

উন্নয়নমুখী প্রথম জাতীয় বাজেট

অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ১৯৭৩-৭৪ সালের সাধারণ বাজেট পেশ করেছেন। বাজেট রাজস্ব খাতে ৩৭৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা আয় করে এবং ২৯৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে দেখানাের পর ৭৯ কোটি ২ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত হয়েছে। অপর পক্ষে উন্নয়ন ও পুনঃনির্মাণ খাতে ৫২৫ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ দেখানাে হয়েছে। রাজস্ব খাতে উদ্বৃত্ত নীট মূলধন প্রাপ্তি, নতুন কর প্রস্তাব, বৈদেশিক সাহায্য ও অন্যান্য উপায়ে অর্থ সংস্থান করে এই ব্যয় করা হবে। উন্নয়ন ও পুনর্নির্মাণ ব্যয় বরাদ্দ ৫২৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা পূরণের জন্য বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্যের প্রয়ােজন। হবে ৩৫২ কোটি টাকা। এছাড়া রাজস্ব খাতের উদ্বৃত্ত ৭৯ কোটি ২ লাখ টাকা এবং আভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ৭৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হবে। তা সত্ত্বেও ১৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঘাটতি থেকে যাবে। ঘাটতির এই অর্থ ব্যাংক ঋণ থেকে পূরণ করা হবে। উন্নয়নমুখী এই জাতীয় বাজেটে উন্নয়ন ও পুনঃনির্মাণ কার্যক্রমের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই বাজেটে নতুন প্রকল্পের চাইতে নির্মাণাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ সম্পাদনের ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আগামী বছর উন্নয়ন ও পুনঃনির্মাণ পরিকল্পনায় ব্যয় বরাদ্দ হয়েছে ৫২৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে নির্মাণাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ সম্পাদনে ব্যয় হয় মােট ৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তবে উন্নয়ন পুনঃনির্মাণ। পরিকল্পনার ব্যয়ের জন্য সরকারকে বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। সরকার বিদেশ থেকে ৩৫২ কোটি টাকা সাহায্য পাবেন বলে আশা করছেন। এ ছাড়া এই খাতে ব্যয় বহনের জন্য উন্নয়ন বহির্ভূত খাতের উদ্বৃত্ত ১০০ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা আরােপিত অতিরিক্ত কর বাবদ অর্জিত ২ কোটি ব্যয় করা হবে বলে প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরও ৪৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার প্রয়ােজন হবে। ১৯৭৩-৭৪ আর্থিক বছরে রাজস্ব আয় হবে ৩৭৪ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা যা চলতি আয়ের তুলনায় ১৩২ কোটি টাকা বেশি। চলতি বছর রাজস্ব আয় নির্ধারিত হয়েছে ২৯৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ১৯৭৩-৭৪ সালে রাজস্ব ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ২৯৫ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। এর ফলে রাজস্ব খাতে উদ্বৃত্তের পরিমাণ হবে ৭৯ কোটি ২ লক্ষ টাকা। চলতি বছরের (১৯৭২-৭৩ সাল) চেয়ে আগামী বছর যে ১৩২ কোটি টাকা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে তার মধ্যে ১০২ কোটি টাকা আমদানি ও রপ্তানি শিল্প এবং আবগারী বিক্রয় ও আয়কর থেকে আসবে বলে বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছর শুল্ক যােগ্য আমদানির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা হবে বলে ধরা হয়েছে। এই আমদানির অর্থ সংস্থান হবে আমাদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা এবং প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্য থেকে। আমদানির এই মাত্রা বাস্তবায়িত হলে আমদানি শুল্ক ও বিক্রয়কর বাবদ ১৮৮ কোটি টাকা দেওয়া হবে। আবগারী কর বাবদ আয় হবে ৬২ কোটি ৫ লাখ টাকা! সুদ ডিভিডেন্ট ও মূলধন প্রাপ্তি রূপে ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত খাত থেকে আসবে ৩২ কোটি টাকা। এছাড়া ভূমি রাজস্ব স্ট্যাম্প ও রাষ্ট্রীয়করণ বাবদ মােট প্রাপ্তি চলতি বছরের তুলনায় সামান্য বেশি হবে। আগামী বছরে ডাক বিভাগে ঘাটতি হবে চলতি বছরের মতাে। ডাক বিভাগের মােট আয় ৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ডাক বিভাগেরও মােট ব্যয় ৭ কোটি ২২ লক্ষ টাকা। সেজন্য নীট পরিচালন ক্ষতি ২ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা ধরা হয়েছিল। তার এই দূরালাপনী বিভাগের কৃত্যাদির হার বাড়ানাের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী ডাক বিভাগের ঘাটতি কমবে। এবং তার দূরালাপনী বিভাগে উদ্ধৃত্তাংশ বাড়িয়ে উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা হবে। আগামী বছরে রাজস্ব ব্যয় বৃদ্ধি পাবে চলতি বছরের তুলনায় শতকরা ৩০ ভাগ। বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে রাজস্ব ব্যয়ের শতকরা ১৬ ভাগ এবং শিক্ষাখাতে শতকরা ২০ ভাগ বরাদ্দ করা হয়েছে। শিক্ষা খাতে সর্বাধিক ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বেতন হারে বৈষম্যহ্রাস, উৎপাদনশীল বৃদ্ধিতে উৎসাহদান এবং জীবনযাত্রার মান যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে চাকুরি কাঠামাের জন্য সমন্বয় সাধনের জন্য যে বেতন কমিশন গঠন করা হয়েছে তার সুপারিশ বাস্তবায়নে ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে চলতি বছরের তুলনায় ২ কোটি টাকার মতাে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাজেটের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য : ১. রপ্তানি খাতে আয় হবে ৩৪০ কোটি টাকা। ২. আমদানি খাতে ব্যয় হবে ৫০০ কোটি টাকা। ৩, আমদানি শুল্ক ও বিক্রয় কর বাবদ আয় হবে ১৮৮ কোটি টাকা। ৪. আবগারী শুল্ক বাবদ আয় হবে ৯৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ৫. বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৭ কোটি টাকা। ৬. রাজস্ব খাতে ব্যয়ের শতকরা ১৬ ভাগ প্রতিরক্ষা ব্যয় করা। হবে। ৭. বাংলাদেশের নিজস্ব ধাতব মুদ্রা তৈরির জন্য ব্যয় হবে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ৮. আদমশুমারী বাবদ ব্যয় হবে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। ৯. উন্নয়ন ও পুনর্গঠন পরিকল্পনায় ব্যয় হবে ৫২৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তন্মধ্যে বৈদেশিক সাহায্য ধরা হয়েছে ৩৫২ কোটি টাকা। ১০. গ্রামীণ পূর্ত কর্মসূচিতে ব্যয় হবে ২১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদ উন্নয়নে ব্যয় হবে ৭০ কোটি টাকা। ১১. শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৫৮ কোটি ৪৪ লাখ ব্যয় করা হবে।৫৩

রেফারেন্স: ১৪ জুন ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ