জুলাই থেকে ভারতীয় দ্রব্য বর্জনের সিদ্ধান্ত ঘােষণা- মওলানা ভাসানী
চট্টগ্রাম। আজ অপরাহ্নে লালদিঘী ময়দানে এক বিরাট জনসমাবেশে মওলানা ভাসানী ঘােষণা করেন যে, আগামী জুলাই মাস থেকে ভারতীয় দ্রব্যাদি বর্জন করা হবে। তার ৩ দফা দাবি সরকার মেনে না নিলে তিনি দেশব্যাপী ব্যাপক গণআন্দোলন, ভুখা মিছিল, ঘেরাও ইত্যাদি শুরু করবেন। তিনি সরকারকে আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। মওলানা সাহেব তার কর্মী, সমস্ত বিরােধী দলীয় নেতা ও কর্মীদের কাছে আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, কেউ যেন কোন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে উৎসাহ না দেন। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেলে ক্ষমতাসীন সরকার বাধ্য হয়ে দাবি মানতে সম্মত হবেন। মওলানা ভাসানী ঘােষণা করেন, ভারত, রাশিয়া, আমেরিকা। সবার সাথে তিনি বন্ধুত্ব রাখতে চান, কিন্তু কারাে দাসত্বে রাজি হবেন না। ভারতের একশ্রেণির শােষকদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আগামী জুলাই মাস থেকে সমস্ত। ভারতীয় দ্রব্যাদি বন্ধ করে দেয়া হলে সমস্ত শােষণের অবসান হয়ে যাবে। তিনি সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগ ও কিছু সংখ্যক দুবৃত্ত বাংলাদেশে একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বাঙালি হিন্দুকে গুপ্ত হত্যা করে একটা ব্যাপক সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে বলে তিনি অভিযােগ করেন। মওলানা ভাসানী বলেন, বাঙালিরা ভাত ছাড়া অন্য কিছু খেতে অভ্যস্ত নয়। সুতরাং অন্তত একবেলা ভাতের ব্যবস্থা করতেই হবে। তিনি মনে করেন যে, বাঙালিরা তিন বেলা ভাত খেতাে এখন তারা অন্তত দুবেলা রুটি খেয়ে একবেলা ভাত খেতে পারলেই সুখী হবে। সভাশেষে বিরাট এক মিছিল সহকারে মওলানা সাহেব কোর্ট হীল অভিমুখে যাত্রা করেন। তিনি ডিসিকে ঘেরাও করবেন বলে সভাতেই ঘােষণা করেছিলেন। কোর্ট হীলে ওঠার সময় চট্টগ্রাম ডেপুটি কমিশনার এবং পুলিশ এসপি কোর্টহীলের গােড়াতে এসে মওলানা সাহেবকে অভ্যর্থনা করেন। মওলানা সাহেব গাড়ি থেকে নেমে ডিসি এবং এসপির সাথে গভীর হৃদ্যতাপূর্ণ কোলাকুলি করে তাদের কুশলাদি জিজ্ঞেস করেন। মওলানা সাহেব তাদের বলেন, আমি আর পাহাড়ের ওপর উঠবাে না। অতঃপর কোর্ট হীলের পাদদেশ থেকে মওলানা সাহেব ও তার মিছিল অন্যদিকে চলে যায়।১১
রেফারেন্স: ৩ জুন ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ