বঙ্গবন্ধুর অনুরােধে মওলানা সাহেবের অনশন ভাঙ্গা উচিত
ঢাকা। আজ মওলানা ভাসানীর অনশন ধর্মঘটের ৪র্থ দিন অতিবাহিত হয়। এদিকে মওলানা সাহেবের অনশন ধর্মঘট অব্যাহত থাকায় তার বার্ধক্য ও ভগ্ন স্বাস্থ্যের প্রেক্ষিতে শুধু উৎকণ্ঠাই সৃষ্টি হয়নি, সেই সাথে যাদের কাছে মওলানার স্বাস্থ্যের চেয়ে আশু রাজনৈতিক লাভালাভ বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এখানকার রাজনৈতিক মহল বলেন যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বয়ং গত বুধবার সন্ধ্যায় ভাঃ-ন্যাপ অফিসে গিয়ে মওলানা সাহেবের সাথে দেখা করেন। বঙ্গবন্ধু যে বয়ােবৃদ্ধ নেতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সত্যিকারভাবে উদ্বিগ্ন এ সাক্ষাৎকার তার পরিচয় বহন করছে। এর প্রেক্ষিতে জনগণ আশা করছিলেন যে, মওলানার অনশনের সমাপ্তি ঘটবে। কিন্তু মওলানার সহকর্মীরা তাকে অনশন চালিয়ে যাওয়ার উপদেশ দিয়ে এ কথাই প্রমাণ করেছেন যে, তারা মওলানা সাহেবের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অনুভূতি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। পর্যবেক্ষক মহল আরাে বলেন যে মওলানা ভাসানীর সাথে বঙ্গবন্ধু দেখা করার মধ্যে রাজনৈতিক কিছু ছিল না। বঙ্গবন্ধু অতীতেও একাধিকবার পিজি হাসপাতালে মওলানা সাহেবের সাথে দেখা করে তার সুচিকিৎসার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। পর্যবেক্ষক মহল বলেন যে, অনশন ধর্মঘটের মাধ্যমে যেসব সমস্যার সমাধান দাবি করা হচ্ছে সেগুলাে প্রথম থেকেই বঙ্গবন্ধুর সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। সরকার সম্ভাব্য সব রকমের সূত্রে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সংগ্রহ করছেন। দেশ বিদেশে সকল নিরপেক্ষ মহল একথা স্বীকার করেছেন যে, বিদেশে আশঙ্কা প্রকাশ করা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর সরকার দুর্ভিক্ষ রােধে সফল হয়েছেন। এটা একটা বাস্তব ঘটনা যে, বঙ্গবন্ধুর সরকার কাউকেই অনাহারে মরতে দেননি। এ মহল আরাে বলেন যে, সরকার একাধিকবার জনগণের মনােভাবের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন এবং এসব সমস্যা সমাধানে সব। রকম ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে। পর্যবেক্ষক মহল আরাে বলেন যে, জনগণের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালােবাসা কারাে চাইতে কম নয়। দুর্যোগের সময় বঙ্গবন্ধু যখন বারবার ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে জনগণের কাছে ছুটে গেছেন, তখন মওলানা ভাসানীর সহকর্মীরা শুধু বিবৃতি দিয়ে ক্ষান্ত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তারা ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী নারকীয় সময় সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার সুদূর গ্রাম অঞ্চলে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সফরের কথা উল্লেখ করেন। পর্যবেক্ষকের মতে, মওলানা ভাসানীর স্বাস্থ্যের কোনাে গুরুতর অবনতি ঘটলে সেক্ষেত্রে যারা তাকে অনশন ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার উপদেশ দিচ্ছেন, তাদেরকেই হয়ত দায়ী হতে হবে।৬৮
রেফারেন্স: ১৮ মে ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ