বঙ্গবন্ধু ২৩ মে এশীয় শান্তি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন
বিশ্ব শান্তি পরিষদের উদ্যোগে আগামী ২৩ মে সকাল সাড়ে নয়টায় ঢাকার শেরে বাংলা নগরে একটি বিশেষ প্যান্ডেলে এশীয় শান্তি সম্মেলন শুরু হবে। সম্মেলনে জাতির পিতা শান্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রসেনা প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানজনক জুলিও কুরী শান্তি পদকে ভূষিত করা হবে। বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে এশীয় শান্তি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। বিশ্ব শান্তি পরিষদের সেক্রেটারি মি. অপি পালিওয়াল মঙ্গলবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন যে, এই উপলক্ষে এশীয় ২৫টি নেতৃস্থানীয় নেতৃবৃন্দ ঢাকা আসছেন। তিনি বলেছেন এশীয় ছাড়াও অন্যান্য মহাদেশ থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবৃন্দ পর্যবেক্ষক হিসাবে সম্মেলনে যােগদান করছেন। মি. পালিওয়াল বলেছেন, আগামী ২ অক্টোবর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত মস্কোতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব শান্তি কংগ্রেসের আলােকে সম্মেলনে শান্তি, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে আলােচনা করা হবে। তিনি বলেন যে, ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য এশীয় শান্তি সম্মেলন হচ্ছে বিশ্ব কংগ্রেসের পূর্ববর্তী কয়েকটি মহাদেশীয় সম্মেলনের প্রথম সম্মেলন। তিনি জানান যে, এরূপভাবে মাদাগাস্কারে আফ্রিকার আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলন, পানামায় ল্যাটিন আমেরিকার এবং রেকজাভিকে (আইসল্যান্ড) ইউরােপীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। মি. পালিওয়াল ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বশান্তি সম্মেলনের আলােচনা সূচি ঘােষণা করেন। তিনি জানান যে, ভারত উপমহাদেশের স্থায়ী শান্তি, ইন্দোচীনের জনগণের শান্তি ও স্বাধীনতা, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও ন্যায় বিচার, সাম্রাজ্যবাদী সামরিক চুক্তি ও এর পটভূমি, বিশ্ব শান্তির জন্য এশীয় দেশসমূহের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সংগ্রাম ও জাতীয় সম্পদ এবং এশীয় দেশগুলাের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যাপারে সহযােগিতা সম্পর্কে সম্মেলনে আলােচনা করা হবে। তিনি জানান যে, এরূপ সম্মেলনের ফলে শান্তির সপক্ষে জনমত গড়ে উঠবে। মি. পালিওয়াল বলেন যে, বিশ্বশান্তি পরিষদ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে উপমহাদেশের অবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য নতুন উদ্যোগকে অনিন্দন জানিয়েছে। ভারতবাংলাদেশের উদ্যোগে পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট মি. জেড এ ভুট্টো সাড়া না দেয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। মি. পালিওয়াল যেসব দেশ এ পর্যন্ত বাংলাদেশের বাস্তবতা স্বীকার করে নেয়নি তাদের অবিলম্বে বাংলাদেশের বাস্তবতা স্বীকার করে নেয়ার আবেদন জানান। তিনি জানান যে, বিশ্বশান্তি পরিষদ পাকিস্তানে বাঙালিদের আটকে রাখা এবং তাদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা করেছে এবং বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করার জন্যে জাতিসমূহের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান যে, বাঙালি জনগণের কাছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পরাজিত হওয়ায় ঢাকাতেই এই এশীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের স্থান হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে।
যারা সম্মেলনে আসছেন : ভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শ্রী চন্দ্রজিৎ যাদবের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি ভারতীয় প্রতিনিধি দল সম্মেলনে যােগদান করছেন। দলে ১০ জন পার্লামেন্ট সদস্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। শ্রীলংকার প্রতিনিধি দলের ৩ জন পার্লামেন্ট সদস্য রয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত নেতা মি. ডীন রীড, গায়নার মি. জেনেথ জাগান, মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য মি. ডেভিট সম্মেলনে যােগদান করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। সম্মেলনে সােভিয়েত। ইউনিয়ন, উত্তর ভিয়েতনাম, দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিপ্লবী সরকার, লাওস, মঙ্গলীয়া, সিরিয়া, লেবানন, ইরাক, মিসর, কুয়েত, দক্ষিণ ইয়েমেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, পােল্যান্ড, হাঙ্গেরি, কিউবা, বৃটেন, ফ্রান্স, অষ্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশের প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক যােগদান করছেন।
বঙ্গবন্ধু সম্মেলন উদ্বোধন করবেন : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। ২৩ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত সম্মেলন অব্যাহত থাকবে। তবে ২৬ মে মস্কোয় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব কংগ্রেসের সম্মেলন সম্পর্কে আলােচনা করা হবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন সম্মেলনে ভাষণ দেবেন।৫৭
রেফারেন্স: ১৫ মে ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ