জিয়া হত্যার পর প্রবাসীদের প্রতিক্রিয়া | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১৯ জুন ১৯৮১
প্রবাস থেকে
প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুতে
ঘড়িতে ৮টা ৫ বাজছিল ভেঙে গেলেও বিছানায় শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে পাকিস্তানী এক ছাত্র দৌড়ুতে দৌড়ুতে এসে খবর দিল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। খবরটা শুনে যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারিনি। তাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে লাগলাম। সে বলল, এই মাত্র বিবিসির খবরে শুনলাম, সম্পূর্ণ ঘটনা বলতে পারব না। কালবিলম্ব না করে রেডিও টিউনিং শুরু করে দিলাম। প্রথম খবরটা পেলাম ভয়েস অফ আমেরিকা থেকে। আস্তে আস্তে বাংলাদেশের খবর কানে আসতে লাগলো। কিন্তু ঘটনা সম্পূর্ণটা পরিষ্কার হল না। কেনই বা প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা হল? দেশে কি আবার কোন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে গেল ইত্যাদি ভাবা শুরু করে দিলাম। পরে চট্টগ্রামের ঘটনাটা সেই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। দেশের এই চরম মুহুর্তে এমন একটা ঘটনা জাতির জন্য যে কতটা মারাত্মক তা সকলে অনুধাবন করতে পেরেছেন।
তুরস্কের রাজধানী আংকারায় ঘটনাটা প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র তিরস্কার ও ধিক্কার দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছিল। ঐ দিন আমাদের কক্ষে একের পর এক তুর্কী ছাত্র আসতে শুরু করে। সকলের মুখে একই কথা ‘বাশিনিসা অলসুন’ অর্থাৎ তুমি দীর্ঘজীবী হও। তুর্কীরা আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত, বন্ধুবান্ধব অথবা দেশের কোন নেতার মৃত্যুতে এই কথাটা বলে। কথাটার মূল ভাবার্থ হল সমবেদনা জানানো এবং যাকে বলছে তার দীর্ঘজীবন কামনা করা। তাদের সকলের একটাই প্রশ্ন কেন তাকে হত্যা করা হল।? কারণ বাংলাদেশ যে একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র তা তাদের ১৯৭৮ এর আগে ধারণা ছিল না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে এখানে পাকিস্তান সরকার অন্যভাবে প্রচার করেছিল। এখানে সবগুলো প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রচার করেছিল। তারা বাংলাদেশকে ভারতের অংশ বলতেও দ্বিধা করেনি। তাই এখানে যখন ১৯৭৮-এর শেষে এলাম তখন সকলের প্রশ্ন ছিল পাকিস্তানী অথবা আরবী কিনা?
আমরা নিজেদের বাংলাদেশী বললে তারা মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতো। কেউ কেউ বলত হিন্দুস্তান (ভারত) আমরা তখন তাদের বোঝাতাম বাংলাদেশ একটা স্বাধীন দেশে। প্রশ্ন করত এটা কোথায় আফ্রিকায়? এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল। তুর্কীদের ভূগোল সম্পর্কে ধারণা অতন্ত কম। এরা ইউরোপ সম্পর্কে বেশি ধারণা রাখে। যা হোক যা বলছিলাম। তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে ১৯৭৭ সালে। ১৯৭৬ সালে ডেপুটি চীফ মার্শাল ল’ এডমিনিস্ট্রেটর থাকাকালীন মরহুম জিয়াউর রহমান তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইসলামী রাষ্ট্রসমূহের সম্মেলনে এসেছিলেন বাংলাদেশের নেতৃত্ব করতে। তার সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রফেসর সামসুল হকও ছিলেন। সেই সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের কূটনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারে তার উদ্যোগ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের ছাত্রদের তুরস্কে অধ্যায়নের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা হয়েছে। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালের নবেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি সর্বাধিক প্রচারিত ‘মিলিয়াত’-এ মরহুম তুরস্কে রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন। এতে করে বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের উন্নতি জোরদার হয়। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হতে তার সেই সফর সাহায্য করেছিল। তার সফরের পর বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রশ্নটা খুব কমে এসেছিল। সফরের সময় এখানকার সবগুলো প্রচার মাধ্যম খুব উৎসাহ দেখিয়েছিল। আর তাতেই বোধ হয় সাধারন মানুষের ধারণাটা পাল্টে যায়। আবার আমার পূর্ব প্রসঙ্গে ফিরে যাই। বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করতে বাংলাদেশকে একটা সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে নিরলস পরিশ্রম করেছিলেন সেটা আমার সাথে সকলে এক বাক্যে স্বীকার করবেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে আরম্ভ করে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৎ ও পরিশ্রমী। সেই ব্যক্তির এমন মৃত্যু নিশ্চয় কেউ আশা করেননি। কিন্তু এমনটি ঘটল। এ প্রশ্নের সম্মুখীন এখানে যেমন হয়েছি সেই সঙ্গে নিজেকে এ প্রশ্নটা বার বার করেছি। তাই তাদের প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারিনি। বলেছি হয়ত কোন স্বার্থলোভী মহলের চক্রান্ত যা বিদেশী শক্তির সাহায্যে সম্ভবপর হয়েছে।
তুর্কী ছাত্র শিক্ষক ছাড়াও আংকারা শহরে পরিচিত সকলে আমাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। তারা বাংলাদেশের পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিল। তারা কিছুতেই বুঝতে পারছিল না কেন এমন একজন ব্যক্তিকে হত্যা করা হল যিনি বাংলাদেশকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তুর্কীরা জেনেছিল। তাই তাদের আফসোস। তার মৃত্যু সংবাদ এখানকার সকল পত্র-পত্রিকা বেতার টেলিভিশন বহুবার প্রচারিত হয়েছিল। চট্টগ্রাম শহর মুক্ত হওয়া এবং মরহুম প্রেসিডেন্টকে দাফন করার সব খবর এরা প্রচার করেছে। টেলিভিশনে বাংলাদেশের এক বিশাল জনসভায় ভাষণদানরত জিয়াউর রহমানকে দেখিয়েছে। এরপর জিয়াউর রহমানের জনগণের সঙ্গে একাত্মতার একটা নিদর্শন স্বরূপ জনসভা শেষে জনগণের মধ্যে করমর্দনরত অবস্থায় তাকে দেখিয়েছে।
Rafiqlu Haque
Middle East Technical University
2 Dormitory, Room-512
Ankara
Turkey
।। ২।।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন, বাহরাইন মহামান্য প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নিহত হবার সংবাদে বিশেষভাবে বিচলিত ও মর্মান্তিকভাবে দুঃখিত। তার পবিত্র আত্মার শান্তি, দুঃখ ভারাক্রান্ত পরিবার বর্গের জন্য সহানুভূতি ও দেশের কল্যাণ কামনায় এক শোকসভা, মিলাদ মাহফিল ও কোরানখানি ৪ জুন সন্ধ্যা ৭টায় এসোসিয়েশন ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় বহু বাংলাদেশী সমবেত হয়ে এক বিশেষ মোনাজাতে গণতন্ত্রের প্রতীক মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পবিত্র আত্মার শান্তি, অশ্রুসজল নয়নে
ও ব্যাথাতুর কন্ঠে পরম করুণাময়ের কাছে কামনা করেন। সবশেষ বাংলাদেশের আশু কল্যাণ প্রত্যাশা করে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
সায়েদুল ইসলাম
সাংগঠনিক সম্পাদক
।। ৩।।
তিরিশে মে শনিবার লাঞ্চ শেষে কর্মকক্ষে ফিরেছি। মিশরীয় সহকর্মী ইন্টারকমে বলে উঠলেন, এইমাত্র রিয়াদ বেতার থেকে বলা হয়েছে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আর বেঁচে নেই। চট্টগ্রাম তাকে হত্যা করা হয়েছে। অসম্ভব! দৌড়ে যাই সহকর্মীর চেম্বারে। বলো, কি হয়েছে! সত্যি বলো, তেমন কিছু আদৌও হয়েছে কিনা। বিয়াদ বেতারের দুপুরের সংবাদে শুধু এটুকুই বলা হয়েছে, বিস্তারিত সংবাদ দেওয়া হয়নি।
দিশেহারা হয়ে পড়ি। একি হলো চারদিকে পরিচিত জনকে ফোন করি, কাউকে পাই না। ঢাকায় ট্রাংককল বুক করে বসে থাকি, কোন সাড়া মিলে না। অবিরাম ফোন করে চলি জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে। সাড়া নেই। তখন অপরাহ্ন দুটো। দূতাবাসকে অধিকর্তারা দফতর বন্ধ করে যথারীতি ফিরে গেছেন নিজ নিজ ঘরে। তারা একবারও ভাবেননি এই দুর্যোগের দিনে প্রবাসী বাংলাদেশীরা প্রেসিডেন্টের খোঁজ নেবেন দূতাবাসে। জনসংযোগের কাউকে টেলিফোনে বসিয়ে রাখার এতটুকু দায়িত্ব কিংবা প্রয়োজন তারা কেউ করেননি।
কেবলই প্রার্থনা করি, এই অশুভ সংবাদ যেন কিছুতেই সত্যি না হয়। কিন্তু না, বিদেশী বেতার আর স্থানীয় টেলিভিশনের সান্ধ্যকালীন পরিবেশনে এই নির্মম সংবাদটি এক সময় বিশ্বাস করে নিতেই হয়! রিয়াদে পরিচিত জনেরা জড়ো হই। পিতার মৃত্যুর মতই কষ্টবহ দুঃসংবাদটি সবাইকে নির্বাক, মূহ্যমান করে রাখে।
স্মৃতি বড় দুর্বহ। এইতো সেদিনের কথা। প্রেসিডেন্ট আসেন তাইয়েফ সম্মেলনে। বিমান থেকে নেমে আসেন আমাদের প্রেসিডেন্ট। বাদশাহ খালেদ, যুবরাজ ফাহদ আহ্বান করেন প্রেসিডেন্টকে। এগিয়ে যান তিনি অতিথি ভবনের দিকে। কাবা গৃহে প্রেসিডেন্ট। মগ্ন হয়ে যান প্রার্থনায়, নিবেদনে। রিয়াদ টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠে প্রেসিডেন্টের মুখ। দূর্লংঘ দূরত্বের এই প্রবাসে কত কাছাকাছি তিনি! বুক ভরে যায় ভালোবাসায়।
সহকর্মীরা বলেন তোমাদের প্রেসিডেন্টকে দেখেছি টেলিভিশনে। বলি হ্যাঁ, আমাদের প্রেসিডেন্ট! প্রিয় প্রেসিডেন্ট, আপনি বড় ক্লান্ত! অনেক মাইল পথ হেঁটে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবিরাম নিবেদিত শ্রম শেষে আপনি বড় শ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। এবার আপনি বিশ্রাম নিন। স্বচ্ছ সলিলবহ ভরভরতি নদী, প্রান্তরময় সবুজ ফসলের দোলা আর কিষান মায়ের কোল জুড়ে সবল স্বপ্ন শিশুর স্বপ্ন চোখে মুখে, শ্রদ্ধেয় প্রেসিডেন্ট নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকুন!
মোশাররফ
পোস্ট বক্স ৭৫৩২ রিয়াদ
কাঁদো বাংলাদেশ কাঁদো
জানিনা কি লিখবো? রেডিও ছেড়ে লেখার টেবিলে কেন এলাম? কেন ভোর পৌনে চারটায় ঘুম থেকে উঠে, বসে থাকি রেডিওর কাছে। কেন, ক্যাম্পের সবাই আমাদের দু’জনের মুখের দিকে তাকায় বারে বারে। জানি না, আমার বন্ধু আজ তিনদিন ধরে কেন প্রলাপ বকছে। যে কখনো নিউজ শুনতো না, সে কেন সারা দিনরাত রেডিও নিয়ে পড়ে থাকে। থেকে থেকে দীর্ঘশ্বাসে বাতাস কোন ভারী হয়?
এই সবগুলি ‘কেন’-র উত্তর প্রত্যেকের জানা। কে জানতো, আর একটা নতুন ‘কারবালার’ সূচনা হবে সবুজ বাংলাদেশে। কে জানতো, সারা পৃথিবীকে স্তম্ভিত করে, গোটা জাতিকে বজ্রাহত করে, এমনি করে সব শেষ হয়ে যাবে। হ্যাঁ—, আজ সবই শেষ হয়ে গেছে। ‘মুক্তিযুদ্ধের নায়ক আজ চিরনিদ্রায় শায়িত’। আমি একজন অতি সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশী। জিয়া হত্যার কারণ অনুসন্ধানের ক্ষমতা আমার নেই। এই রাজনৈতিক বিশ্লেষণর পাণ্ডিত্য থেকেও আমি বঞ্চিত। আমি ডাল-ভাত খাওয়া মোটা কাপড় পরা পিতা-মাতার সন্তান। আমি শুধু জানি ফসলহীন মাঠের দিকে তাকিয়ে আবার বাপ আর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন না। এখন তাঁর চিঠিতে পড়ি, ‘বাবা এবার ইরি মোটামুটি ভাল হয়েছে। বাড়িতে বাতি থাকায় ছিঁচকে চোরের উপদ্রবও কমেছে।’ আমার মাকে ও আর তাঁর তিনটি জোয়ান ছেলের বিপদাশংকায় বিনিদ্র রাত কাটাতে হয় না। দেশে গেলে চান্দু মাদবর তার হাবিব ভাইর সঙ্গে দেখা করার সময় পায় না, ইরি প্রজেক্টের কাজের চাপে। ভিন্নমত পোষণ করার অপরাধে বৃদ্ধা মায়ের বুক খালি করে নৃশংস ভাবে খুন হতে হয় না সিদ্দিক মাস্টারদের। নবপরিণীতা স্ত্রীকে বিধবা করে বাদলদেরও দূরে চলে যেতে হয় না অকালে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের এতিম করে মোতালেব বেপারীদের ও প্রাণ দিতে হয় না শোষকের ব্রাশ ফায়ারে। এ সবই প্রেসিডেন্ট জিয়ার কারণে। সাধারণ মানুষের মুখে একটু হাসি, একটু স্বস্তি, একটু সুখের অন্বেষায় প্রাণপাত করেছেন জিয়া। পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটেছেন উল্কার বেগে। দেশের ৬৫ হাজার গ্রামের আনাচে-কানাচে পৌঁছে দিয়েছেন আশ্বাসের বাণী, ফিরিয়ে এনেছেন আত্মবিশ্বাস, দিয়েছেন কর্মের প্রেরণা।
এ সবই সেই মহান রাষ্ট্র নায়কের অপরাধ। আর সেই অপরাধেরই মাশুল দিতে হলো তাঁকে ঘাতকের গুলিতে। হায়রে! অভাগা দেশ। হায়রে! হতভাগা বাংলাদেশী। আর কতকাল সিরাজের অতৃপ্ত আত্মা কেঁদে বেড়াবে মীরজাফরদের বিশ্বাসঘাতকতায়? আর কতদিন আমরা রক্তের ঋণ শোধ করবো এমনি করে? শোকের গভীরতা যেখানে অসীম ভাষা সেখানে মূক। তাই বেদনা পাথর হয়ে জমে আছে বুকের গভীরে। দেশবাসী আজ কাঁদছে। আমরাও গুমরে মরছি। রেড-সীর লোনা জলের সঙ্গে আমাদের দু’ফোঁটা অশ্রুজলও বয়ে চলছে বঙ্গোপসাগরের দিকে। জানি না এর শেষ কবে?
হাবিবুর রহমান
আচিরডন এস, এ,
পোঃ বক্স নং ১৭১৪
জেদ্দা
সৌদী আরব
প্রবাসী বাংলাদেশীদের শোক বার্তা
মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের এই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক হত্যা গোটা দেশের অফুরন্ত ক্ষতি ছাড়া বিবেকবান ও সাধারন মানুষ অন্য কিছু মেনে নিতে পারবে না। আমরা এই হত্যাকে জঘন্যতম অপরাধ ও নিষ্ঠুরতার পরিচয় বলে গণ্য করি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যার মধ্যে কোন হিংসা বিদ্বেষ, অহংকার ছিল না। তিনি ছিলেন সৎ, আদর্শ, ন্যায়পরায়ণ ও স্বার্থ ত্যাগীদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তি এবং তিনি ছিলেন অধিক পরিশ্রমী ও কর্মঠ। তাছাড়া কাজের প্রতি উৎসাহ ছিল অত্যন্ত প্রবল। তিনি বাংলাদেশের গ্রামে, গঞ্জে, ক্ষেত খামারে মানুষকে পরিশ্রমের উৎসাহ ও প্রেরণা যুগিয়েছিলেন প্রবল উদ্দীপনার মাধ্যমে। আর মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে আমরা এমনি এক ক্রান্তিলগ্নে হারিয়েছি, যখন আমাদের দেশ দ্রুত উন্নতির পথে প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল। যে সব নর ঘাতকের দল ষড়যন্ত্র করে আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে জাতির উন্নয়নমুখী পরিকল্পনার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে তাদেরকে আমরা তীব্রভাবে নিন্দা করি ও মৃত্যুদণ্ড দাবী করি। আর এই মুহূর্তে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার ও সেনাবাহিনীর প্রধান লেঃ জেনারেল এরশাদ ভয়াবহ পরিস্থিতির মোকাবেলা করে যে অসীম সাহসিকতার ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য জানাই অভিনন্দন। আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে হাজার হাজার কর্মরত বাংলাদেশী নাগরিক মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমাদের শোকাবিভূত অন্তর থেকে সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
এম, এ, মতিন, আযহারুল হক, জহির মনির, এম হক, ইকরাম, ডি, মহম্মদ মুস্তাফিজ, নূর মহম্মদ আরও হাজার হাজার বাংলাদেশী নাগরিকবৃন্দ।
প্রযত্নেঃ— বি,ডি, সি/ আলসাদ,
পোস্ট বক্স— ৩৩২৮
আবুধাবী
ইউ,এ, ই
।। ২।।
আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশী। আমাদের প্রিয় মহান নেতা, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অকাল মৃত্যুতে গভীরভাবে মর্মাহত। আমরা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে দেশ ও জাতির যে অপরিসীম ক্ষতি হয়েছে তা নিঃসন্দেহে অপূরণীয়। তিনি শুধু বাংলাদেশের প্রিয় নেতা ছিলেন না, সারা মুসলিম জাহানেও বিশেষ প্রিয় ও অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধ অবসান কল্পে তাঁর শান্তি-প্রচেষ্টা সর্বজন প্রশংসিত। তাঁর রাজনৈতিক নৈপুণ্য ও বহুমুখী কর্মধারার ধরুন আজ বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে অভূতপূর্ব মর্যাদা লাভ করেছে। তার আদর্শ ও আকাঙ্ক্ষা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিফলিত হোক।
হারুন, রফিক, হাশেম ও লুলু সারজা
জিয়ার মৃত্যুঃ ভারতীয় অনুভূতি
জিয়ার মৃত্যুর পর পরই আমার ত্রিভানদ্রম থেকে রাঁচী প্রায় ষোলশ মেইল পথ সফর করার সুযোগ হয়েছিল। কেরালা থেকে বিহার সর্বত্রই এই একই অনুভূতিত প্রতিধ্বনি শুনেছি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের এমনি নৃশংস হত্যাকান্ডে ভারতের জনগণ গভীরভাবে মর্মাহত। একজন সাধারণ মানুষ থেকে নিয়ে বুদ্ধিজীবী সবাইকে একই আক্ষেপ করতে শুনেছি— জিয়াউর রহমানকেও বাংলাদেশ মেরে ফেলল। অনেকেই তো প্রথমতঃ আমাদের প্রেসিডেন্ট বলে বিশ্বাসই করতে চায়নি। তারা ভেবেছে পাকিস্তানের জিয়া। ভেতরে ভেতরে যে প্রেসিডেন্ট জিয়া এদের কাছে এতোটা প্রিয় এবং শ্রদ্ধাভাজন হয়ে উঠেছিলেন তা এই প্রথম টের পেলাম।
একজন সুদক্ষ রাষ্ট্রবিদ এবং সৎ ব্যক্তি হিসেবে জিয়াউর রহমান সবখানে আলোচিত হয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে এনে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছেন সবার। এদের দুঃখ এমন একজন ব্যক্তিকে বুলেটের শিকার হতে হল যিনি তার দেশের জন্য এত কিছু করেছিলেন। এখানকার সব সংবাদপত্রে মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়ার ছবি বড় করে ছাপানো হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তার উচ্চ প্রশংসা করা হয়েছে সব কাগজে। একটি দৈনিকের প্রথম পাতায় প্রকাশিত এক বিশেষ নিবন্ধে জিয়াউর রহমানের মৃত্যু করা হয়েছে—
A double tragedy (For Bengladesh & India)
বলে।
মিজানুল হাসান শেলী
রাঁচী— ৮৩৪০০৯
ভারত
‘জিয়া নেই’
৩০ মে শনিবার বিকেলে পবিত্র কাবা ঘর হতে বের হয়েই যখন বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ও সর্বাধিক উচ্চারিত নাম ‘জিয়া’র হত্যার সংবাদ শুনতে পাই তখন স্তব্ধ ও হতবাক হয়ে পড়েছিলাম। জিয়া ছিলেন সারা দেশের সামনে ঐক্যের প্রতীক। যার নাম ঘরে ঘরে উচ্চারিত, বহির্বিশ্বে যিনি ছিলেন সবচেয়ে সুপরিচিত, যার নাম বলে আমরা আরব বিশ্বে গর্বিত ছিলাম। যিনি দেশের উন্নতির জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেতেন তিনি আজ আততায়ীর গুলিতে নিহত। এ যে আমাদের নিকট কত বড় শূন্যতা তা কিভাবে ব্যক্ত করবো?
এটা জোর করেই বলা যায় জিয়াকে হত্যা করা মানেই স্বাধীনতাকে হত্যা করা। তিনি ছিলেন আমাদের স্বাধীনতার ও সংগ্রামের প্রতীক। তাকে বাদ দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস রচনা করা যাবে কি? কি? স্বাধীনতার জন্য আমরা জিয়ার নিকট কতটুকু কৃতজ্ঞ? এর উত্তর সাপ্তাহিক ‘টাইম’ (৮ জুন, ১৯৮১)-এর ‘Deathe at Night’ শিরোনামের সংবাদটি খুজলেই পেতে পারি যাতে বলা হয়েছে,
‘Ten years ago this spring. Young Major Ziaur Rahman broadcast an electrifying message from a clandestine Radio in the East Pakistan city of Chittagong proclaining a rebellion against West Pakistan that ultimately created the Nation of Bangladesh. ‘
তাহলে জিয়াকে হত্যা করে আমরা কি পৃথিবীর নিকট একটি অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে পরিচিত হলাম না? জিয়া কি কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলেন? ক্ষমতা আর গদির প্রলোভন তাঁকে কি কোনদিন আকৃষ্ট করেছিলো? পরিচিতজন ও আত্মীয়স্বজনদের তুমি কি কখনো প্রশ্রয় দিয়েছিলেন? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর সবাই এক কথায় বলবে ‘না’। তথাপিও কেন এই হত্যাকান্ড?
এর পেছনে কোন অশুভ চক্রান্ত কাজ করেছে তা বুঝতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশে আসার মাত্র দু’সপ্তাহের ভিতরে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ সন্ধায়ক, আন্দামান ও শরার এসে নোঙ্গর করে দেশের সীমানায়। তালপট্টিতে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করে এবং সর্বশেষে ঘটে প্রেসিডেন্ট জিয়ার হত্যাকান্ড। এতগুলো ঘটনার পেছনে কি উক্ত দলটির কোনই ভূমিকা ছিল না? নিহত প্রেসিডেন্ট জিয়া সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সাপ্তাহিক ‘টাইম’ বলেছে
‘The slain zis had been one of south asia’s Most Promising leaders, a man who lead modestly while others chose corruption, who searched tirelessly for solutions to his country’s awesome poverty.’
এমন ব্যক্তিত্ব দ্বিতীয়টি এ যুগে বাংলাদেশে আর জন্মাবে কি?
Hamid Rashid
P. Box No- 4978
Jeddah
S. Arab