রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ১৬টি সংশােধনী
১০ এপ্রিলে সংসদে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আলােচনা শুরু হলে বিরােধী ও স্বতন্ত্র সদস্যরা উক্ত ভাষণের ওপর মােট ১৬টি সংশােধনী আনয়ন করেন। তন্মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় লীগের সদস্য জনাব আতাউর রহমান খান একাই ১০টি সংশােধনী উত্থাপন করেন। জনাব আতাউর রহমান রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপনমূলক সিদ্ধান্তের সাথে তার ১০টি সংশােধনী সন্নিবেশের জন্য সংসদের অনুমােদন কামনা করেন। উল্লেখযােগ্য, জনাব আতাউর রহমান, সৈয়দ কামরুল ইসলাম, মােহাম্মদ সালাহউদ্দিন, জনাব আবদুস সাত্তার, শ্রী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এই ১৬ সংশােধনী উত্থাপন করেন। জনাব সৈয়দ কামরুল ইসলাম, মাে. সালাহ উদ্দিন কর্তৃক উত্থাপিত ১১ নং সংশােধনীটি স্পিকার বিধি বহির্ভূত বলে নাকচ করে দেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের জনাব আবদুস সাত্তার, স্বতন্ত্র সদস্য জনাব সৈয়দ কামরুল ইসলাম, মাে. সালাহউদ্দিনকে স্পিকার ইতােপূর্বে স্ব স্ব সংশােধনী উত্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন। জনাব আতাউর রহমানের উত্থাপিত সংশােধনীগুলাের মূল বিষয় হলাে, দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি মােকাবিলা করার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা। খাদ্যমন্ত্রী অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিজনিত সরকারের অযােগ্যতা। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যর্থতা। পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের ফেরত আনার ক্ষেত্রে কার্যকরি ও ফলপ্রসূ উপায় নির্ধারণের ব্যর্থতা। মুদ্রাস্ফীতি ও ধাতব মুদ্রা হ্রাসের বিপদজনক প্রবণতা এবং শিক্ষার মানােন্নয়নে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের অভাব। উপসংহারে তিনি এ মর্মে সংসদের দুঃখ প্রকাশকে লিপিবদ্ধ করাতে সুপারিশ করেন যে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বলা ভুল। শ্রী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তিনটি সংশােধনী উত্থাপন করেন। শ্রী লারমা রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবের পরিশিষ্টে কয়েকটি ব্যাপারে সংসদের দুঃখ প্রকাশে উল্লেখ রাখতে বলেন। তন্মধ্যে একটি হলাে, অত্যন্ত দুর্দশাপূর্ণ জীবনযাপন করছে এ ধরনের পতিতা নারীদের পুনর্বাসনের জন্য কোনাে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। রাষ্ট্রীয় মূলনীতির বিপক্ষে গিয়ে বিদেশি লগ্নিপুঁজি আকর্ষণীয় প্রয়ােজনীয়তার কথা রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় উল্লেখ করায় সেজন্য সংসদে দুঃখ প্রকাশের জন্য শ্রী লারমা দাবি জানান। যুক্ত ভারত-বাংলাদেশ কমান্ডারের কাছে আত্মসমর্পণকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কবে করা হবে সে সম্পর্কে তথ্যজ্ঞাপনে সরকারের ব্যর্থতায় সংসদের দুঃখ প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে শ্রী লারমা ৩য় সংশােধনীটি উত্থাপন করেন। জনাব আবদুস সাত্তার (জাসদ) তার সংশােধনীতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রসঙ্গের কোনাে উল্লেখ রাখতে সরকারের ব্যর্থতার জন্য দুঃখ প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে সংশােধনী আনেন। সৈয়দ কামরুল ইসলাম, মাে. সালাহউদ্দিন সংসদের দুঃখ প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে দুটো সংশােধনী আনেন। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নীতি অনুসারে সরকারের ব্যর্থতার ভাষণে উল্লেখ না করায় এবং মুসলিম দেশগুলাের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার পদক্ষেপসমূহ নির্ধারণে সরকারের ব্যর্থতার জন্য সংসদকে তিনি দুঃখ প্রকাশ করতে বলেন। বৃহস্পতিবার একদিন মূলতবির পর জাতীয় সংসদ স্পিকার। জনাব মাে. উল্লাহর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু করলে সংসদে রাষ্ট্রপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরীর ১০ এপ্রিলের ভাষণের ওপর সরকারি দলের জনাব আসাদুজ্জামান খান ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাব উত্থাপন করে সুদীর্ঘ বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতির ভাষণটিকে বাস্তব নির্ভর বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সরকারি করতে পেরেছি। কী করতে পারিনি রাষ্ট্রপতির ভাষণে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে। তিনি এ ভাষণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন ও রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানানাের জন্য সংসদের প্রতি আহ্বান জানান। সরকারি দলের জনাব কোরবান আলী তাকে সমর্থন করেন। রাষ্ট্রপতিকে তার ভাষণের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপনে। সরকারি দলীয় সদস্যদের প্রস্তাবের ওপর সংশােধনী আনা যায় কিনা এ নিয়ে অপরাহ্নে সংসদে তুমুল বিতর্ক চলে। একে একে সরকারি দলের জনাব তাহের উদ্দিন ঠাকুর, জনাব আবদুল মােমিন তালুকদার। এর বিরােধিতা করেন। স্পিকার বলেন যে, তিনি সংশােধনীগুলাে অনুমােদন করেছেন এবং এগুলাে সংসদে আলােচনা হতে দেয়া উচিত। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, জনাব তাহের উদ্দিন ঠাকুর ও জনাব মােমিন তালুকদারের আপত্তির বিরােধিতা করে বলেন যে, কার্যপরিচালনা বিধির ৩৪ নং বিধি ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবে সংশােধনী আনবার অনুমতি দেয়। আইনমন্ত্রী এ মত সমর্থন করেন এবং বলেন। যে, কোনাে সংশােধনী গ্রহণযােগ্য তা নির্ধারণের চূড়ান্ত দায়িত্ব স্পিকারের। একবারে তিনি একটি প্রস্তাব পরিষদে আলােচনার অনুমতি দিলে স্পিকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করা সদস্যদের পক্ষে অনুচিত। স্পিকার জনাব মাে. উল্লাহ সংসদে সংশােধনীগুলাে আলােচনার অনুমতি দিয়ে বলেন যে, তিনি এ ক্ষেত্রে ভারতীয় পার্লামেন্টের নীতি অনুসরণ করেছেন।৪৬
রেফারেন্স: ১২ এপ্রিল ১৯৭৩, দৈনিক সংবাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ