অতলান্ত সমস্যার সমাধানে ত্যাগ স্বীকারে এগিয়ে আসুন- রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী আজ জনগণের প্রতি নতুন জাতির অতলান্ত সমস্যার কথা অনুধাবন করে ঐক্য, শৃঙ্খলা ও আত্মত্যাগের মনােভাব নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। জাতির দ্বিতীয় স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ও টেলিভিশন বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন যে, যুদ্ধ ও বিপ্লবের পর স্বাধীনতাপ্রাপ্ত যেকোন নতুন জাতিকে বিরাট দুঃখ কষ্ট ও আত্মত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তিনি বিশেষ জোরের সাথে বলেন যে, দেশের বিভিন্ন সমস্যা জয় করে জাতিকে সুখ ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন যে, আমরা তাদের এই আত্মত্যাগকে বৃথা যেতে দিতে পারি না। আমরা যে আত্মত্যাগের মনােভাব, অবিচলিত ঐক্য ও অবিনশ্বর শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, খােদার রহমতে সেই শক্তি দিয়েই জাতীয় উন্নতির জন্য সংগ্রাম সাফল্য অর্জন করব বলে রাষ্ট্রপতি মন্তব্য প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে লাঞ্ছিত লক্ষ লক্ষ মা বােনদের ও হাজার হাজার আহত ও পঙ্গু মুক্তিযােদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন যে, তাদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার ঋণ কোনােদিনই শােধ হবে না। তাদের সাহায্যের জন্য গঠিত দুটি সংস্থার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি দেশের বিত্তবানদের প্রতি সরকারি প্রচেষ্টার সাথে তাদের অবদান যােগ করার আহ্বান জানান। নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর উপনিবেশবাদী পাকিস্তান চক্রের কলঙ্কিত আক্রমণের বর্ণনা করে রাষ্ট্রপতি বলেন যে, হানাদারদের ভিন্নতম গণহত্যা ও নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এদেশের এক সপ্তমাংশ লােককে দেশ ছেড়ে বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করতে হয় এবং অবশিষ্ট জনগণের জীবনে পেতে থাকে মৃত্যু ও নিপীড়নের বিভীষিকা। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলাদেশের বিপদকালে যে সমস্ত দেশ সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করেছিল তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার সাথে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। রাষ্ট্রপতি বলগাহীন জনসংখ্যার বৃদ্ধিকে দেশের সর্ব প্রধান সমস্যা বলে বর্ণনা করে বলেন, এই ধরনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আগামী ২০ বছরে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণে দাঁড়াবে। তিনি জন্মের হার কমানাের জন্য দেশবাসীর প্রতি সরকারি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সাহায্য নিয়ে। পরিবারের অতিরিক্ত জন্ম নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানান। খাদ্য সমস্যা নিয়ে বলতে যেয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন যে, দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে খাদ্য। তিনি বলেন যে, দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে প্রতি বছর বিদেশ থেকে ২০ থেকে ৩০ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হচ্ছে। খাদ্য ঘাটতি মেটাতেই যদি দেশের কষ্টার্জিত সব বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়ে যায়, তাহলে জাতির। আর্থিক উন্নতি প্রয়ােজনে যানবাহন শিল্প কারখানার জন্য যন্ত্রপাতি সার-সরঞ্জাম কেনার অর্থ সঙ্কুলান হতে পারে না বলে তার মত প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন যে, এই কারণেই জনসংখ্যা কমানাের সাথে আমাদেরকে খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য খাদ্য শস্যের উৎপাদন ও চোরাচালান বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এর জন্য শুধু সরকারের দিকে চেয়ে থাকলে চলবে না।১০০
রেফারেন্স: ২৫ মার্চ ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ