টাঙ্গাইলে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ
পাকিস্তানের মানুষ এবং সৈন্যরা মনে করেছিল দুনিয়া মনে করেছিল যে, বাঙালি জাতিকে অস্ত্র দিয়ে দাবাইয়া রাখতে পারবে না। স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতি একদিন স্বাধীন হবে। ইনশাআল্লাহ আজ বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, আজ দুনিয়ার ৯৭টা দেশ বাংলাদেশকে মেনে নিয়েছে। স্বীকৃতি দিয়েছে। আজ আমার দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, পাকিস্তানের নেতাদের এখনও ঘুম ভাঙ্গে নাই, তারা আজ আমার তিন-চার লক্ষ বাঙালিকে আটকিয়ে রেখেছে। তারা আজও তাদের মুক্তি দিচ্ছে না। তারা তাদের নিয়ে খেলা করছে। ভুট্টো সাহেবের মনে রাখা উচিত যতই দালাল সৃষ্টি করুক না কেন, বাংলার মানুষকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ইনশাআল্লাহ বাংলায় আমরা ফেরত নিয়ে আসবাে। তােমরা আজকে বলেছ যে, যুদ্ধবন্দিদের বিচার করাে না। যারা আমার মা-বােনের উপর দু’লক্ষ মা-বােনের ইজ্জত নষ্ট করেছে, যারা আমার দুঃখী মা-বােনকে হত্যা করেছে। যারা আমার গ্রামকে গ্রাম ছারখার করেছে, যারা আমার এক কোটি লােককে দেশ ত্যাগ করে ভারতবর্ষ যেতে বাধ্য করেছিল তাদের বিচার ইনশাআল্লাহ যদি আমি বেঁচে থাকি এই বাংলার মাটিতে হবে, কেউ ঠেকাতে পারবে না। আমরা তাদের (পাকিস্তানি) কাছে জানতে চাই আমার বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানে কি অন্যায় করেছিল? আমার বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানে চাকুরি করছিল, ব্যবসা করছিল, তাদের রাখার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? আমার রাষ্ট্র দুনিয়ার অষ্টম বৃহৎ রাষ্ট্র। বাঙালিরা আর কিছু হতে পারে, বাঙালিরা নেমকহারাম নয়। বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বাংলার মানুষ যদি আমি হুকুম দিই একটি একটি করে জীবন বিলিয়ে দেবে। বাংলার স্বাধীনতা নস্যাৎ হতে দেবে না। আমি আপনাদের দলিল দিয়ে গেছি। কারণ, আজ আমি আছি কাল নাও থাকতে পারি। আজ আমি মরে যাবার পারি। কিন্তু বাংলার মানুষকে কি দিয়ে যাবাে। সেই জন্য একটা দলিল করে দিয়েছি। যে সদস্যদের আপনি ভােট দিয়েছেন তাদের নিয়ে আমি দলিল করেছি, তাকে বলা হয় শাসনতন্ত্র। যাতে বাংলাদেশের মানুষের সমস্ত অধিকার তার মধ্যে লেখা আছে। তাদের অধিকার আর কেউ নেবার পারবে না। একটা কথা পরিষ্কার বলে যাই, একদল লােক সাম্প্রদায়িকতা বিস্তারের চেষ্টা করছে। বাংলার মাটিতে আর সাম্প্রদায়িকতা দানা বেঁধে উঠতে দেয়া হবে না। আপনারা আমার সাথে আছেন? আপনারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন? আপনারা শােষণহীন সমাজে বিশ্বাস করেন? আপনারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করেন? আপনারা বাঙালি এই কথা ভুলবেন না। আপনারা বাঙালি। আমরা বাঙালি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা। যদি এর বিরুদ্ধে কোন দিন কোন কাজ করতে চান, তাদের মনে রাখা উচিত শাসনতন্ত্রে এই চারটা স্তম্ভ দেশের লােক মেনে নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে কথা বলা যে অর্থহীন। আইন সকলের জন্য সমান।৪৭
রেফারেন্স: দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ