বাংলাদেশ সােভিয়েত বন্ধুত্ব অন্য কোনাে মিত্র দেশের জন্য প্রতিবন্ধক হবে না
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ ঘােষণা করেন, সােভিয়েত বাংলাদেশ বর্তমান মৈত্রীবন্ধন কোন দেশের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব স্থাপনের পক্ষে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। মন্ত্রী মহােদয় সন্ধ্যায় সােভিয়েত ইউনিয়নের স্বীকৃতি দান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়ােজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। বাংলাদেশ সােভিয়েত মৈত্রী সমিতির উদ্যোগে আয়ােজিত এই অনুষ্ঠানে সভানেতৃত্ব করেন কবি বেগম সুফিয়া কামাল। বাংলাদেশে নিযুক্ত সােভিয়েত রাষ্ট্রদূত মি. পােপভও এই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনাব নবী সমাগত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে ভাষণ দেন। প্রধান অতিথির ভাষণে জনাব সামাদ বলেন, উদ্দেশ্য প্রণােদিত হয়ে কোন দেশ আমাদের সাথে বন্ধুত্ব করুক এটা আমরা চাই না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমরা সব দেশের সাথে পারস্পরিক মর্যাদার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব কামনা করি। সােভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে যারা কটাক্ষ করেন, তারা এই দুই দেশের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে চান। সােভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের দুর্দিনের বন্ধু বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শােষণ থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার জন্য সমগ্র বিশ্বের শান্তিকামী এবং সংগ্রামী মানুষই বাংলাদেশের বন্ধু। জনাব সামাদ বাংলাদেশকে সমর্থনদানের জন্য সােভিয়েট ইউনিয়ন, জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরী, পােল্যান্ড এবং আফ্রো এশীয় লাতিন আমেরিকান দেশগুলাের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, সােভিয়েত ইউনিয়নের সহযােগিতায়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পাতা বােমা অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সােভিয়েত ইউনিয়ন এগিয়ে না এলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে খাদ্য সামগ্রী আমদানি করা সম্ভব হতাে না। জনাব সামাদ পাকিস্তানের সংবিধানে তথাকথিত পূর্ব পাকিস্তানের স্থান রাখার জন্যে ভুট্টোর তীব্র সমালােচনা করেন। তিনি বলেন, এটা আন্তর্জাতিক নীতিমালার পরিপন্থী। বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সােভিয়েত ইউনিয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ অর্থনৈতিক দিক থেকে অবশ্যই স্বাবলম্বী হবে। বাংলাদেশে নিযুক্ত সােভিয়েত রাষ্ট্রদূত মি. পােপভ বলেন, সােভিয়েত ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের মধ্যে বিরাজিত বন্ধুত্ব দিনের পর দিন আরও শক্তিশালী হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সােভিয়েত ইউনিয়ন সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, সােভিয়েত সরকার বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাজে সর্বতােরকম। সাহায্য ও সহযােগিতার জন্য বঙ্গবন্ধুকে আশ্বাস দিয়েছে। তিনি বলেন, ইতােমধ্যেই সােভিয়েত সরকার বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও কারিগরি ক্ষেত্রে নানা রকম সাহায্য দিয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন যে, সােভিয়েত ইউনিয়নের সাথে বাংলাদেশের মৈত্রী বন্ধুত্ব চির অটুট থাকবে।৯২
রেফারেন্স: ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ