ক্ষতিগ্রস্ত নারী পুনর্বাসন জাতীয় কর্তব্য- বঙ্গবন্ধু
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, পাকিস্তানি বর্বর হানাদার সৈন্যদের কবলে যেসব মহিলা নিগৃহীত হয়েছেন, তাদের পুনর্বাসন জাতীয় কর্তব্য। স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত মহিলা ও নিরাশ্রয় শিশুদের পুনর্বাসনের কাজের জন্য সরকার সম্ভাব্য সব রকম সাহায্য করবে বলে বঙ্গবন্ধু ঘােষণা করেন। শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পুনর্বাসন সংস্থা আয়ােজিত আশ্রিতা মেয়েদের তৈরি ‘হস্তশিল্প প্রদর্শনীতে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী ভাষণ দিচ্ছিলেন। অনুষ্ঠানে ভাষণদান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান যে, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত মহিলা ও নিরাশ্রয়দের পুনর্বাসনকল্পে দেশের প্রতিটি নাগরিককেই পুনর্বাসন সংস্থাকে সাহায্য ও সহযােগিতা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, নিগৃহীতা মহিলাদের সুষ্ঠুভাবে পুনর্বাসন হল কিনা এবং তাদের পারিবারিক জীবনে সুখ ফিরে এলাে কি না তা দেখার দায়িত্ব সমাজের। নিগৃহীতরা যদি সমাজে ঠাই না পায় তাহলে স্বাধীনতা অর্থহীন হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দেশে আরও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলা দরকার। বিদেশে এ ধরনের অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে যে, লাঞ্ছিত মানবতার ডাকে বিপুল সংখ্যক মানুষ এগিয়ে আসে বলে তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নিগৃহীতা মহিলাদের আত্মত্যাগকে জনসাধারণের এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, আমি সমাজে এদের পুনর্বাসন হয়েছে দেখতে চাই। এবং পারিবারিক জীবনে এদের সুখ সমৃদ্ধি কামনা করি। যারা দেশকে ভালবাসেন এবং মানবতার পূজারি, তাদের প্রতি বঙ্গবন্ধু আহ্বান জানিয়ে বলেন যে, ক্ষতিগ্রস্ত ও নিগৃহীতাদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন। তিনি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মহৎ কর্মসূচির ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশকে ধ্বংস করে গেছে। এই বর্বর ধ্বংসযজ্ঞের কথা জনসাধারণকে স্মরণ রাখা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন। বঙ্গবন্ধু ঘােষণা করেন যে, এসব নিগৃহীতা মহিলাদের যদি কেউ জীবন সঙ্গী হিসাবে গ্রহণ করতে চান, তবে তাদের সাধ্যমত সাহায্য করা হবে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, নিগৃহীতাদের বিয়ে করার জন্য অনেকে সম্মত হলেও নানা রকম দাবি করেন। এই দাবির মাধ্যমে তাদের মনের সংকীর্ণতা প্রকাশ পায় বলে তিনি অভিমত দেন। তিনি পুনর্বাসন সংস্থাটিকে আশ্বাস দিয়ে বলেন যে, তাদের মহতী উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে তাদের প্রতি সরকার সহযােগিতার হাত সম্প্রসারিত রাখবে। তিনি বিদেশি সংস্থাগুলােকে মানবতার কাজে সাহায্য প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এ, এইচ, এম, কামারুজ্জামান : সাহায্য ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এ,এইচ, এম, কামারুজ্জামান বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করতে হলে আমাদের জাতীয় চরিত্রের পরিবর্তন দরকার। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ফল ভােগ করার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের সমান রয়েছে। বিধ্বস্ত বাংলাকে সােনার বাংলায় রূপান্তরিত করা হলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন সফল হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব প্রতিটি মানুষের। দেশ পুনর্গঠিত না হলে সুখী সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে না। তিনি বলেন, অসুখী এবং নিগৃহীতাদের পুনর্বাসন না হলে জাতি প্রগতির দাবি করতে পারবে না। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুজিববাদের মাধ্যমে সমৃদ্ধশালী সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। অনুষ্ঠানে মহিলা পুনর্বাসন সংস্থার সভানেত্রী বেগম সুফিয়া কামাল প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদিকা মিসেস সাহেরা আহমদ সংক্ষেপে সংস্থার কার্যবিবরণী বর্ণনা করেন। প্রধান অতিথি ও অন্যান্যদের ধন্যবাদ জানান মিসেস তাসলিমা আবেদ। অনুষ্ঠান শেষে সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হস্তশিল্প প্রদর্শনী মেলা ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং সংস্থার আশ্রিতা মেয়েদের এবং তৈরি বিভিন্ন হস্তশিল্প দেখে তার গুণগত উৎকর্ষতার প্রশংসা করেন।৫৪
রেফারেন্স: ১২ জানুয়ারি ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ