You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.01.08 | সীমান্তে যাও, চোরাচালান নির্মূল করে দাও- বঙ্গবন্ধু | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সীমান্তে যাও, চোরাচালান নির্মূল করে দাও- বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সােমবার সীমান্ত এলাকার চোরাচালান সম্পূর্ণ নির্মূল করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে পিলখানায় বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রথম ব্যাচের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অভিবাদন গ্রহণকালে উপরােক্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন যে, শীঘ্রই তাদের সীমান্ত এলাকায় পাঠানাে হবে। তিনি বলেন, বিডিআরদের জনসাধারণের সহযােগিতায় সীমান্তে চোরাচালানী স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে চোরাচালান রােধকল্পে সেনাবাহিনী মােতায়েন রাখা সম্ভব নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নব নিযুক্ত বিডিআরদের সুশৃঙ্খল, সৎ এবং জনদরদী হতে হবে। শৃঙ্খলা ছাড়া কোন শক্তিই মহত্ত্ব অর্জন করতে পারে না বলে অভিমত প্রকাশ করে বিডিআরদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী, রক্ষীবাহিনী, বিডিআর এবং পুলিশ বাহিনী এরা সবাই মাতৃভূমি বাংলার সন্তান। মাতৃভূমিকে সেবা এবং মাতৃভূমির নিরাপত্তা রক্ষা করা এদের সবারই নৈতিক দায়িত্ব বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রক্ত মূল্যে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। মাতৃভূমির এই স্বাধীনতাকে। রক্ষাকল্পে প্রয়ােজনবােধে জীবন দিতেও বিডিআরদের প্রস্তুত থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, সবাই মাতৃভূমিকে ভালােবাসেন এবং তিনিও তাদের ভালােবাসেন। তাদেরও দেশবাসীকে ভালােবাসতে হবে। কারণ দেশবাসী তাদের মাতা, পিতা এবং ভগ্নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তান বর্বর বাহিনী পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধুর বাসভবন আক্রমণের উল্লেখ করে বলেন যে, বাংলাদেশ রাইফেলসের বীর জওয়ানরা পাকিস্তান। বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরােধ গড়ে তুলেছিল এবং শত শত প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিডিআর বাহিনীও তার ডাকে সাড়া দিয়ে হানাদার বাহিনী নিধনে মরণপণ লড়াই করেছিল। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিডিআরদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম বাংলাদেশবাসী চিরদিন স্মরণ রাখবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, সােনার বাংলা গড়তে হলে সবাই হৃদয়বান হতে হবে এবং সৎ পন্থা অবলম্বণ করে সুখী ও সমৃদ্ধশালী জীবন গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনসাধারণ শুধু স্বাধীনতার সংগ্রামে বিজয়ী হয়নি। স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্বও কাঁধে নিয়েছে। তিনি বলেন, দুইশত বছর ধরে বাঙালিরা অস্ত্রের শিক্ষা পায়নি। কিন্তু বর্তমানে অস্ত্রের শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালিরা যেন প্রমাণ করে দিতে পারে যে, সামরিক দিক দিয়েও বাঙালিরা অযােগ্য নয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের শেষে শপথ গ্রহণকারীরা বজ্র কণ্ঠে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব কোরবান আলী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম, খন্দকার মােশতাক আহমদ, আবদুল মালেক উকিল, আবদুস সামাদ, জে. এম এ জি ওসমানী এবং আবদুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্য, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিও উপস্থিত ছিলেন।৩৫

রেফারেন্স: ৮ জানুয়ারি ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ