জামালপুরের জনসভায় তাজউদ্দীন আহমদ
জামালপুর। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশের মেহনতি মানুষের কল্যানের পথ সুগম করে সরকার শীঘ্রই তাঁর সুচিন্তিত ভূমি ও শিল্পনীতি ঘোষণা করবেন। স্থানীয় কলেজ প্রাঙ্গণে এক বিরাট জনসভায় তিনি বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন যে, বর্তমান ভূমিব্যবস্থার একটি ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করা হবে এবং এই ব্যাপারে সরকারের নীতি এমনভাবে তৈরী করা হবে যেন বাংলাদেশ মেহনতী মানুষের দেশ হয় গুটিকতক সুবিধাভোগী মানুষের দেশ না হয়। জনাব তাজউদ্দীন দেশবাসীকে, বিশেষ করে তরুণ ও শ্রমিক সমাজকে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করার এবং জাতীয় পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ ও অধুনালুপ্ত মুক্তিবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে এই সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং জনাব শামসুদ্দীন খান ইহাতে সভাপতিত্ব করেন। জনাব ময়েজউদ্দীন আহমদ এমসিএ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগ নেতা জনাব আবদুল আজিজ বাগমারও এই সভায় বক্তৃতা দেন। জনাব তাজউদ্দীন তাঁর দুইঘন্টাব্যাপী বক্তৃতায় বলেন যে, বহু রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, তা রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, আমার দৃঢ় আশা আছে, আমাদের সাহসী জনগণ, বিশেষ করে তরুণরা বহু মূল্যে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব পালনে পিছপা হবে না। তিনি বলেন যে, জনগণ যাতে আর অতীতের ন্যায় শোষিত হতে না পারে তার ব্যবস্থা করাই সরকারের প্রথম কর্তব্য। তিনি বলেন, ৩০ লাখ জীবনের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তার অর্থ শুধু দেশের নাম পরিবর্তন নয়- পাকিস্তান হতে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, স্বাধীনতার অর্থ হলো যুগযুগান্তের দারিদ্র শোষণ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক অন্যায়-অবিচারের অভিশাপ হতে জনগণকে প্রকৃতই মুক্ত করা।
মন্ত্রী মহোদয় জনগণকে জাতি গঠনের কাজে নিঃস্বার্থভাবে আত্মনিয়োগ করার উদাত্ত আহবান জানান। তিনি বলেন স্বাধীনতার ফল প্রত্যেকে যাতে ভোগ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং এই লক্ষ্যে পৌছার একমাত্র পথ হলো শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করে দেশ পুনর্গঠনের বিরাট কাজে প্রত্যেকের শরীক হওয়া। পার্শ্ববর্তী শিল্প কারখানাগুলোর শ্রমিকগণও মিছিল সহকারে এই জন সভায় যোগ দেন। মন্ত্রীমহোদয় তাঁদের উদ্দ্যেশে বক্তৃতা দানকালে কলকারখানাগুলো সর্বক্ষণ চালু রেখে উৎপাদন বৃদ্ধির আকুল আবেদন জানান। তিনি বলেন যে, সরকার শ্রমিকদের দাবিদাওয়া ও অভাব অভিযোগ সম্পর্কে অবগত আছেন। তিনি তাদেরকে ধৈর্য ধরতে বলেন।
কৃষকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী মহোদয় বলেন যে, কৃষিক্ষেত্রে বিরাট বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে এবং যান্ত্রিক চাষপদ্ধতির দ্বারা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জনাব তাজউদ্দীন আহমদ ছাত্রদের সম্পর্কে বলেন যে, সরকার তাদের সমস্যাবলী সম্পর্কে সচেতন আছেন এবং এগুলি সমাধানের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন যে, মেধাবী ও দারিদ্র ছাত্রদের জন্য প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। তিনি ছাত্রদের শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার এবং উপযুক্ত নাগরিক রূপে নিজেদের গড়ে তোলার আবেদন জানান।১৩০
রেফারেন্স: ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ