কৃষি বিপ্লবের জন্য কাজ করুন- বঙ্গবন্ধু
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের কৃষি বিপ্লব সাধনের জন্যে চাষিদের প্রতি কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি রামগতিতে এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা করছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, বাংলাদেশে এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবেনা। বঙ্গবন্ধু দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি জন্যে স্বাবলম্বন এবং আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে বাঁধ পুনঃনির্মাণের জন্যে যারা ঝুড়ি ও কোদাল নিয়ে বাঁধ এলাকায় উপস্থিত হন শেখ মুজিব তাদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, জাতির অর্থকোষ এখন শূন্য। কারণ হানাদাররা কেবল লোকজনকেই হত্যা করেননি তারা নির্বিচারে এদেশের ধনসম্পদ ধ্বংস ও লুট করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, বিশ্বে কোনো জাতিই স্বাধীনতার মূল্য এতো রক্ত দেয়নি। কঠিন সংগ্রামলব্ধ স্বাধীনতাকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, বৃটিশরা দু’শ বছর শোষণ করেও জাতিকে যত ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি পাকিস্তানীরা ২২ বছরে তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
সাড়ে সাত কোটি মানুষ আছে: শেখ মুজিব বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানীরা বাংলাদেশের সবকিছু ধ্বংস করে গেছে এবং যা ধ্বংস করতে পারেনি তারা তা পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গেছে। কিন্তু প্রগতিশীল জাতি হিসেবে দেশকে গড়ে তোলার জন্য আমার এখানে ইস্পাতদৃঢ় সংকল্পের অধিকারী সাড়ে সাত কোটি মানুষ আছে। সংগ্রাম এখনও অব্যাহত রয়েছে মনে করে বঙ্গবন্ধু জাতির পুনর্গঠনের জন্যে জনসাধারণকে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, দেশ সকলের কাছ থেকে অভিনন্দন জানান; কিন্তু তা শর্তহীন হতে হবে। তিনি বলেন, আমারা স্বাধীনতার বিনিময়ে সাহায্যের জন্য ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বাইরে যেতে পারি না। কাজেই জনগণকে শুধু কাজ আর কাজ করে যেতে হবে।
সরকার জনগনের: তিনি বলেন বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। আমাদের এখন সমাজ কায়েম করতে হবে যেখানে ক্ষুধার্ত মানুষ চাষি ও শ্রমিক পুনরায় হাসবে। সাধারণ মানুষের ন্যুনতম প্রয়োজন মেটাতে না পারলে স্বাধীনতাই বৃথা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দুষ্কৃতকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি: বঙ্গবন্ধু দুষ্কৃতকারীদের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন যে, তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। তিনি বলেন যে, যারা স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করেছে, তারা তার হাতে অস্ত্র হস্তান্তর করেছে। কিন্তু কতিপয় দুষ্কৃতকারী পাকিস্তানী বাহিনীর চররা এখনো ধরে আছে। তিনি এসব অস্ত্র দুষ্কৃতকারীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী অর্থ আত্মসাৎ এবং ক্ষমতা অপব্যবহারের বিরুদ্ধে অফিসারদের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। তিনি এব্যাপারে জনসাধারণকে প্রহরীর মতো কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, তিনি বেঁচে থাকুন আর নাই বা থাকুন এদেশে আর কখনো শোষক এবং মোটা ভুড়িওয়ালাদের স্থান হবে না।১০৪
রেফারেন্স: ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ