সমাজবিরোধী দুস্কৃতিকারীদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর কঠোর হুঁশিয়ারি
সমাজবিরোধী লোক ও গুন্ডাবদমাইশদের জঘন্য কার্যকলাপকে বরদাস্ত করা হবে না এবং অচিরেই তাদের শক্ত হাতে দমন করা হবে। পিলখানার মিলিশিয়াদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুধবার এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, সমাজবিরোধী লোকেরা নিরিহ নাগরিকদের অযথা হয়রানি করছে এবং তাদের সম্পত্তি লুট করছে। তিনি এসব দুস্কৃতিকারীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সতর্ক থাকতে বলেন। পিলখানার মিলিশিয়া সদর দপ্তরে সাবেক ই পি আর সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জন্য এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটনা ঘটালেও বঙ্গবন্ধু সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের সেই ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটান। বঙ্গবন্ধু সেখানে উপস্থিত হলে তারা তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানান। এবং দু দলই ‘বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ’, ‘জাতির জনক জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেয় এবং বঙ্গবন্ধুর সামনেই বিবদমান দুদলই পরস্পর পরস্পরকে আলিঙ্গন করেন। বঙ্গবন্ধু ছাড়া অপর যারা মিলিশিয়াদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করেন তারা হলেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব জনাব তোফায়েল আহমেদ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওসমানী ও গ্রামরক্ষী বাহিনীর প্রধান জনাব আব্দুর রাজ্জাক এম সি এ ও জনাব সিরাজুল আলম খান। বঙ্গবন্ধুর সামনেই বিবদমান দু দলই তাদের অস্ত্র সমর্পণ করেন।
ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন : প্রধানমন্ত্রী মিলিশিয়াদের উষ্কানীদাতা ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার এবং দেশের সংহিত রক্ষার জন্য তাদের সুশৃঙ্খল সৈনিক হিসেবে একাত্ম হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি তাদের আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা করতে উপদেশ দেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা আর্জিত হলেও আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে এবং দেশ স্বাধীন হয়েছে বলে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মতৃপ্তি লাভের কোনো অবকাশ নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কষ্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও সাহসের সঙ্গে কাজ করে যাওয়া উচিত। তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি এবং প্রয়োজন হলে আরো অধিক আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এখন আন্তর্বিরোধের সময় নয়। বঙ্গবন্ধু সমবেত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বর্তমান অবস্থায় যেকোনো অন্তর্বিরোধ নবজাত এই রাষ্ট্রের কেবল ধ্বংসই ডেকে আনবে না বরং তা আমাদের জন্য বদনামও ডেকে আনবে। তিনি বলেন, দেশের সামনে রয়েছে এখন এক বিরাট পুনর্গঠনের দায়িত্ব।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বিধ্বস্ত : প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন যে, হানাদের পাকিস্তানিবাহিনী বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে গেছে। এ অবস্থায় পল্লী এলাকায় লক্ষ লক্ষ লোকের খাদ্য ও আশ্রয় ব্যবস্থাও করতে হবে। কেননা, হানাদাররা তাদের ঘড়বাড়ি জ্বালিয়ে নিয়েছে। তিনি জানান, কলকারখানাগুলোর ক্ষতি করা হয়েছে, খাদ্য গুদাম লুণ্ঠিত হয়েছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। এর ফলে সর্বস্তরের লোকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, জনসাধারণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করার ব্যাপারে সরকার খুবই উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের বলেন যে, জাতীয় পুনর্গঠনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদেরকে চাকুরি দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে। কিন্তু বর্তমানে দেশের সামনে যেসব অসুবিধা রয়েছে তিনি তাদেরকে সে সম্পর্কে ওয়াকেবহাল হতে বলেন।
রেফারেন্স: ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ