জাপান ও কিউবা স্বীকৃতি দিয়েছে
ঢাকা। সূর্যোদয়ের দেশ জাপান আজ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে সরকারি স্বীকৃতি দিয়েছে বলে টোকিও সরকার ঘোষনা করেছে। জাপানি প্রধানমন্ত্রী মি. ইসাকো সাতো বলেছেন যে, ঢাকাস্থ জাপানি কন্সাল জেনারেলের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে তার সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। মি. সাতোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রী সভার বৈঠকে আজ সকালে এই স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জাপান এই নতুন রাষ্ট্রকে তার স্বীকৃতি দেওয়ার অভিপ্রায় ইতোপূর্বে ওয়াশিংটনকে জানিয়ে দিয়েছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, নয়া দিল্লিস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রধান জনাব এইচ আর চৌধুরীর কাছে কিউবার চার্জ দ্য এফেয়ার্স ড. এঞ্জেল ফেরাস বাংলাদেশকে এই ল্যাটিন আমেরিকান দেশটির স্বীকৃতি দেয়ার কথা জানান। এখানে উল্লেখযোগ্য যে ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলোর মধ্যে কিউবাই প্রথম বাংলাদেশকে পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি দিল। তবে ভেনেজুয়েলার পার্লামেন্ট স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইতোপূর্বে তার সরকারের নিকট দাবি জানিয়েছে। জাপান ও কিউবার স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতিদানকারী দেশগুলির সংখ্যা তেত্রিশে উন্নীত হলো।
খবরে বলা হয় যে, জাপানি প্রধানমন্ত্রী ইসাকো সাতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমানের কাছে প্রেরিত এক তারবার্তায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই নুতন দেশের প্রতিষ্ঠাকে অভিনন্দিত করেছেন এবং ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. তাকেয়ো ফুকুদা জাপানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে গিয়ে বলেছেন যে, নতুন সরকারের প্রতি জনগণের ব্যাপক সমর্থন ও সক্রিয় নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। মি. ফুকুদা আরো জানান যে, বাংলাদেশের স্বীকৃতি দেয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যেও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। পরে পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে জানানো হয় যে, জাপান বাংলাদেশের সাথে রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে সম্পর্ক স্থাপন করবে। বাংলাদেশ সরকারের টোকিওস্থ প্রতিনিধি জনাব এস এম মাসুদ বলেছেন যে, তার সরকার শীঘ্রই টোকিওতে দূতাবাস খুলবে। তিনি আরো বলেন যে, বাংলাদেশকে জাপানের স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক শুরু হলো। স্বীকৃতি দেয়ার এক ঘন্টার মধ্যে তিনি টোকিওস্থ বাংলাদেশ মিশনে পতাকা উত্তোলন করেন।
সাতোকে বঙ্গবন্ধুর ধন্যবাদঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আজ এখানে বলেন যে, বাংলাদেশ ও জাপানের জনগণের পারষ্পরিক সুবিধার্থে দুই দেশের মধ্যকার ভবিষ্যৎ সহযোহিতার ক্ষেত্র ক্রমশ সম্প্রসারিত হবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইসাকো সাতো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমানের কাছে যে অভিনন্দন বাণী পাঠিয়েছেন, তার জবাবে বঙ্গবন্ধু মি. সাতোকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক বাণী পাঠিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু তার বাণীতে বলেন, জাপানের ন্যায় একটা মহান এশীয় দেশ আমার দেশকে স্বীকৃতি দেয়ায় আমি অত্যন্ত সুখী হয়েছি। জাপানের প্রগতি ও সমৃদ্ধি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এশীয়ায় ও আফ্রিকার বহু দেশের কাছে প্রেরণার উৎস। বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, বাংলাদেশের সরকার, জনগণ ও আমার নিজের পক্ষ থেকে জাপানের সরকার ও জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। ৪২
রেফারেন্স: ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ