ভারতীয় সংবাদপত্রের প্রতি বঙ্গবন্ধুর কৃতজ্ঞতা
কোলকাতা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ কোলকাতায় বলেন যে, বাংলাদেশে পাকিস্তানবাহিনীর অত্যাচার মানব ইতিহাসের সমস্ত বর্বরতাকে ছাড়িয়ে গেছে। ইয়াহিয়া খানের সেনাবাহিনী হানাদার হালাকু খান, চেঙ্গিস খান ও হিটলারের অত্যাচারের ইতিহাসকে ম্লান করে দিয়েছে। প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে আয়োজিত এক সম্বর্ধনা সভায় ভাষণ দেয়ার সময় তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের জনগণের ওপর বিশেষ করে দখলদারবাহিনীর আমলে বিভীষিকাময় অত্যাচারের বর্ণনা দেয়ার সময় বঙ্গবন্ধুর কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে। বঙ্গবন্ধু আবেগরুদ্ধ কন্ঠে বাংলাদেশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার ওপর হানাদার পাকিস্তানিদের অমানুষিক অত্যাচারের এক মর্মস্পর্শী বর্ণনা প্রদান করেন। ভারতীয় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, দখলদার পাকিস্তানবাহিনী বাংলাদেশের সংবাদপত্রের বাকরুদ্ধ এবং বাইরের সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ফলে সেখানকার খবর সংগ্রহ দুরূহ হয়ে পড়েছিল। ভারতীয় সাংবাদিক ভাইয়েরা জীবন বিপন্ন করে পাকিস্তানবাহিনীর এসব অত্যাচারের খবর সংগ্রহ করেছেন এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রকৃত পক্ষে কি ঘটছে তার চিত্র বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন। সাংবাদিকরা এই ভূমিকা না নিলে বাংলাদেশের জনগণ, বঙ্গবন্ধুর সহকর্মী ও মুক্তিবাহিনীর পক্ষে বহির্বিশ্বের সাহায্য পাওয়া দুঃসাধ্য হতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্বর্ধনা সভায় আরো বলেন যে, বাংলাদেশ সকল প্রকার শোষণমুক্ত একটা সমাজ ব্যবস্থা কায়েমে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জনগণ অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন না করতে পারলে কঠোর শ্রমে অর্জিত স্বাধীনতা মূল্যহীন হয়ে যাবে। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশের ধনীরা আরো সম্পত্তির মালিক বা গরিবেরা আরো গরিব হবে না। কেউ আর না খেয়ে প্রাণ হারাবে না। প্রত্যেকেই সুখী ও সন্তোষজনক জীবন যাপন করবে বলে তিনি দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে আরো বলেন যে, সাম্রাজ্যবাদের দালাল পাকিস্তানি বর্বর দল তাদের জঘন্য সেনাবাহিনী দিয়ে বাংলাদেশের জনগণকে কেবলমাত্র দমন করে রাখার অপচেষ্টায় ক্ষান্ত থাকেনি, বাংলাদেশের ভাষা ও সংস্কৃতি হরণেরও অপচেষ্টা করেছিল। বিশ্বের জনগণ তাদের অত্যাচারের পূর্ণ বিবরণ পেলে তার বিভীষিকাময় চিত্রে শিহরিত হয়ে উঠতো। সম্বর্ধনা সভার প্রারম্ভে কোলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি শ্রী অমিতাভ দাশগুপ্ত বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন যে, শেখ মুজিব কেবলমাত্র বাংলাদেশের ৭ কোটি মানুষের যোগ্য নেতাই নন বরং ভারতের কোটি কোটি মানুষের বন্ধু। শ্রী অমিতাভ আরো বলেন যে, ভারতের সাংবাদিকরা কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে এবং সবসময় তাঁর ও বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে থাকবে তার নিশ্চয়তা হিসেবে এই সম্বর্ধনার ব্যবস্থা করেছেন। প্রেস ক্লাব বঙ্গবন্ধুকে কবি গুরুর একটি প্রতিকৃতি, বিভিন্ন বিষয়ের বহু বই, এবং জর্জ হ্যারিসন ও রবিশঙ্করের বাজানো একখানি রেকর্ড উপহার দেয়। ১৮
রেফারেন্স: ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ