যে কোন মূল্যে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে- বঙ্গবন্ধু
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, সমাজ-বিরোধী দুষ্কৃতকারী, দুর্নীতিপরায়ণ ও ঘুষখোর ব্যক্তিদের সমূলে বাংলার মাটি হতে উৎখাত করা হবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, সমাজবিরোধী ও দুষ্কৃতকারীরা বন্দুক ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জন-জীবনে সন্ত্রাস বিস্তারের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এদের নির্মূল করে জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। বুধবার সকাল সোয়া নয়টায় ঢাকা হতে ১৬ মাইল। দূরে সাভারে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর দ্বিতীয় দলের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভাষণ দানকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপরোক্ত মন্তব্য করেন। এর পূর্বে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় রক্ষীবাহিনীর দ্বিতীয় দলের অভিবাদন গ্রহণ করেন। প্রায় ৩ হাজার সদস্য সম্বলিত ৫ ব্যাটেলিয়ন জাতীয় রক্ষীবাহিনীর দ্বিতীয় দল সুশৃঙ্খলভাবে কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জ্ঞাপন করে। জাতীয় রক্ষীবাহিনীর পরিচালক লে. কর্নেল নুরুজ্জামান তাদেরকে শপথ পাঠ করে শোনান। অনুষ্ঠানে মন্ত্রীসভার সদস্য, কূটনৈতিক প্রতিনিধি, উচ্চপদস্থ সরকারি ও সামরিক বাহিনীর কর্মচারী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় রক্ষীবাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেন, খুব শীঘ্রই আপনারা আমার একটি নতুন নির্দেশ পাবেন। আমি আশা করি, এই নির্দেশ পাওয়ার পর গ্রামে আপনারা ছড়িয়ে পরে সমাজ বিরোধীদের খুঁজে বের করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা সুনিশ্চিত করার কাজে সহায়তা করবেন। তিনি আরো বলেন, আইন-শৃঙ্খলা সুনিশ্চিত করতে হলে। প্রথমে নিজেদের আইন-শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। অপরাধীদের যেমন ক্ষমা করা যাবে না, তেমন। একজন নিরপরাধ ব্যক্তিও যেন অত্যাচার-জুলুমের অভিযোগ করতে না পারে। জনগণের সাথে বন্ধুসুলভ ও ভালো ব্যবহার করার জন্য তিনি জাতীয় রক্ষীবাহিনীর সদস্যদের উপদেশ দেন। অল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় রক্ষীবাহিনী আত্মপ্রত্যয়ের সাথে যে কর্মতৎপরতার স্বাক্ষর রেখেছে এর জন্য তিনি প্রশংসা করেন। এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পুলিশবাহিনী ও সামরিকবাহিনীর কর্মতৎপরতার কথাও প্রশংসার সাথে উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যে সীমান্তের চোরাচালান বন্ধ করার কাজে আমাদের সামরিকবাহিনী যে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে, বিগত ২৫ বছরের ইতিহাসে তার দ্বিতীয় নজির নেই। বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার ১১ মাসের মধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেশের অনেক সমস্যার সমাধান করা হয়তো সম্ভব হয় নি। তবে জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে টিকে থাকার পথ সুনিশ্চিত করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তুলতেই হবে। আর এই জন্য সমাজ বিরোধী তৎপরতাকে আর প্রশ্রয় দেয়া যায় না। বঙ্গবন্ধু বলেন, সমাজ বিরোধী ও দুষ্কৃতকারীরা যদি মনে করে থাকে যে, আমি দুর্বল, আমার সরকার দুর্বল, তাহলে তারা ভুল করছে। উদারতা প্রদর্শন দুর্বলতা নয়। নিরাপরাধ মানুষের ওপর অত্যাচার চলছে। এইসব ডাকাত ও দুষ্কৃতকারীদের চিরতরে বাংলাদেশ হতে মুছে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, জাতীয় মূলনীতি যারা মানতে চাইবে না, যারা জাতীয় আদর্শের পরিপন্থী হয়ে কাজ করবে তাদের ঠাই বাংলার মাটিতে নাই। বঙ্গবন্ধু বলেন, একটি দেশের আইন-শৃঙ্খলা সুনিশ্চিত করা ব্যতিত কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না। তাই এই দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অক্ষুন্ন রাখার দায়িত্বে সচেতন হবার জন্যে তিনি জাতীয় রক্ষীবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।২১
রেফারেন্স: ৬ ডিসেম্বর ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ