জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর বাণী
প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সামাজিক প্রয়োজন ও সমস্যার আলোকে পরিবার পরিকল্পনার কর্মসূচিকে বাস্তব ভিত্তিতে পুনঃমূল্যায়নের জন্য সমগ্র জাতীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। প্রথম জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা সম্মেলন উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী উপরোক্ত আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার থেকে এখানে এই সম্মেলন শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ইতিহাসে এই ধরনের কোনো দৃষ্টান্ত নেই যে, কোনো পরিকল্পিত জনসংখ্যা ছাড়া উন্নয়নমূলক প্রচেষ্টা সাফল্য লাভ করেছে। এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব উপলব্ধি করার জন্য তিনি সকল দেশপ্রেমিক নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই যে, আমরা যদি সঠিকভাবে আমাদের জনসংখ্যা নিম্নরূপ করতে ব্যর্থ হই তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের সামাজিক নিরাপত্তা ও দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি সুদূরপরাহত হবে। নিম্নে বঙ্গবন্ধুর বাণীর পূর্ণ বিবরণ প্রদত্ত হলোঃ “আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি যে, এই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই ধরনের একটি অত্যাবশ্যকীয় জাতীয় সমস্যার ওপর সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য সংগঠকদের ধন্যবাদ পাওয়া প্রয়োজন। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে দেশের এবং বিদেশের যারা এতে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমাদের দেশে জনসংখ্যা ভীতিজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের একটি অন্যতম জনসংখ্যাধিক্য দেশ। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ভবিষ্যৎ আকার ও আকৃতি সম্পর্কে প্রত্যেকটি দেশপ্রেমিক নাগরিককে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। সমাজিক সমস্যা ও প্রয়োজনের আলোকে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে বাস্তব ভিত্তিতে এর পুনর্মূল্যায়ন করার জন্য সমস্ত জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে। ইতিহাসে এ ধরনের কোনো দৃষ্টান্ত নেই যে, কোনো পরিকল্পিত জনসংখ্যা ছাড়া উন্নয়নমূলক প্রচেষ্টা সাফল্য লাভ করতে পারে। এই প্রশ্নে প্রত্যেকটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। আমাদের একথা পরিষ্কার মনে রাখতে হবে যে, সঠিক পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির ওপরই ভবিষ্যৎ বংশধরদের সামাজিক নিরাপত্তা ও দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি মূলতঃ নির্ভর করছে। আমি বিশ্বাস করি যে, সম্মেলনে যে, বিজ্ঞোজনোচিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। তা থেকে দেশের বহুলাংশে লাভবান হবে। আমি সম্মেলনের সাফল্য কামনা করছি।৭০
রেফারেন্স: ২১ নভেম্বর ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ