বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের প্রশ্নে ভুট্টোর নতুন দোহাই
নিউইয়র্ক। বাংলাদেশকে স্বীকৃতির প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট ভুট্টো তার পূর্বের দাবি পুনরুল্লেখ করে বলেন যে, এর জন্য তার সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের একটা স্বাক্ষাৎকার দরকার। এই ব্যাপারে তার দল এবং বিরোধী দলের সমর্থন সম্পর্কে তার আস্থা থাকা সত্ত্বেও তিনি জানান যে, আমার সকল মানুষের সমর্থন ছাড়া দেশটাকে স্বীকৃতি দেয়া হবে না। প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বলেছেন যে, সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা খুব কম এবং তার দেশ চীনের সমর্থনের ওপর গুরুত্ব দেয়। তিনি অভিযোগ করেন যে, “ভারতের প্রধান মিত্র হিসাবে” সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারত পাকিস্তানের প্রতি হুমকি হিসাবে বিরাজ করেছে। তিনি বলেন, এই হুমকি পাকিস্তানের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনাব ভুট্টো ওয়াশিংটন পোষ্টের প্রতিনিধি লুই সাইমনের সাথে পিন্ডিতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন এবং প্রশ্নোত্তরে এই কথা বলেন। আমেরিকার সামরিক সাহায্যের প্রশ্নে তিনি জানান যে, প্রেসিডেন্ট নিক্সন এখন কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আমেরিকা ভারতের জন্য অনেক কিছুই করেছে। “আমাদের প্রাপ্যটা এখন আমরা চাই।” জনাব ভুট্টো বলেন যে, অস্ত্র সরবরাহ পুনঃ আরাম্ভ করার জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নিকট কোনো আবেদন করেন নাই। এই জন্য যে তিনি নির্বাচনের ব্যাপারে ব্যস্ত আছেন। তবে চীনের সাথে তিনি সম্পর্ক জোরদার করেছেন। কারণ, আমেরিকা অস্ত্র দিবে বলে তিনি নির্ভর করতে পারছেন না। যুদ্ধের সময় আমেরিকা পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল এবং ভারত সম্পর্কে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছিল এই জন্য তিনি আমেরিকার প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমেরিকার অস্ত্র সাহায্যে পূনরারম্ভ করবে বলে তিনি খুব বেশি আশা করেন না। পাকিস্তান সব সময়ই আমেরিকার নিকট ভারতের চাইতে কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ এখন আমেরিকার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের অংশ যখন ছিল তখন কেন এমন গুরুত্ব ছিল না। বাংলাদেশকে সাহায্য করে আমেরিকা ভারতকেই সাহায্য করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
স্বীকৃতির প্রশ্নে আন্দোলন দমন করা হবে : প্রেসিডেন্ট ভুট্টো আজ পেশোয়ারে সর্তকবাণী। উচ্চারণ করে বলেন যে, বাংলাদেশকে স্বীকৃতির প্রশ্নে তার বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন শুরু করা হলে তিনি তা দমন করবেন। পাকিস্তানের জনসাধারণ ও পুলিশ এই ব্যাপারে সরকারের সাথে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রেসিডেন্ট ভুট্টো শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারকে স্বীকৃতিদান করলে তাকে অপসারণের চেষ্টা করা হবে বলে, দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো হুমকী দিয়েছে। জনাব ভুট্টো উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ১১ দিন সফরের উদ্দেশ্যে আজ পেশোয়ার আগমন করেন। তিনি বাংলাদেশের নাম প্রকাশ্য ভাবে উল্লেখ না করলে তা পরিষ্কার ভাবে বুঝা যায়। প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বলেন, জাতির বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি, দূরদর্শিতা এবং সুবিচার ও ন্যায় নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক অথবা যোগসূত্রের প্রশ্নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক আমি তাই চাই।৪৩
রেফারেন্স: ১৬ নভেম্বর ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ