You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.11.13 | রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিফলক | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিফলক

গত বছর ডিসেম্বর মাসে শত্রুর আত্মসমর্পণের প্রাক্কালে যেসকল বুদ্ধিজীবীকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগী আল বদররা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তাদের নাম সম্বলিত একটি স্মৃতিফলক স্থাপনের জায়গা নির্বাচনের ব্যাপারে ঢাকা শহরের উপকণ্ঠবর্তী রায়ের বাজার এলাকার কাঁটাবন পরিদর্শনের জন্যে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্তমন্ত্রী জনাব মতিউর রহমান নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, সান্ধ্য আইন বলবৎ থাকার সময় বহু সংখ্যক বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ছাত্র এবং অন্যান্য ব্যক্তিকে তাদের করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পাকিস্তানবাহিনীর আত্মসমর্পণের ঠিক পূর্বে তাদের হত্যা করা হয়। কাটাবন এলাকায় কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর লাশ পাওয়া গিয়েছিল। ঐ স্থানটিকে তারা বধ্যভূমি হিসাবে ব্যবহার করেছিল। এইসকল নিরীহ ব্যক্তিদের হত্যা করার পূর্বে ঘাতকরা তাদের ওপর অমানুষিক অত্যাচারও চালায়। মৃতদেহগুলোকে এমনভাবে বিকৃত করা হয়েছিল যার ফলে তাদের সনাক্ত করা অসম্ভব হয়েছিল। জনৈক সাংবাদিকের সাথে আলোচনা প্রসঙ্গে জনাব মতিউর রহমান বলেন, আগামি ১৪ ডিসেম্বরের পূর্বেই স্মৃতিফলক স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করাই বঙ্গবন্ধুর অভিপ্রায়। বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ড বেদনাময় ঘটনাকে স্মরণীয় রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ সমিতি এই উপলক্ষে এবার একটি অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেন। গত বছর ১৪ ডিসেম্বর তারিখে বহু বুদ্ধিজীবীকে গৃহ থেকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে দখলদারবাহিনীর দোসর আলবদরগণ তাদের হত্যা করে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন এবং স্মৃতিফলকের আবরণ উন্মোচন করবেন বলে আশা করা যায়। আগামি ১৪ ডিসেম্বর তারিখে কাটাবনের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথী হিসাবে উপস্থিত থাকার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধিদল বঙ্গবন্ধুকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি উক্ত স্মৃতিফলক স্থাপনে স্থান নির্বাচনের ব্যাপারে কাঁটাবন পরিদর্শনে জন্য পূর্তমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বাঙালিদের যে চরম ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে জাতির জন্য তা স্মারক হিসাবে ঐতিহাসিক স্থানরূপে কাটাবনের বধ্যভূমি সংরক্ষণে এবং তথা একটি স্মৃতিফলক স্থাপনের জন্য প্রতিনিধিদল বঙ্গবন্ধুর নিকট প্রস্তাব করেন। বাংলা বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্র সমন্বয়ে গঠিত প্রতিনিধিদল বাংলা বিভাগের ধারা প্রকাশিত পুস্তক সমূহের একটি সংগ্রহ বঙ্গবন্ধুকে উপহার হিসাবে প্রধান করেন।৩৭

রেফারেন্স: ১৩ নভেম্বর ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ