You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.11.04 | আমার স্বপ্নের প্রথম পর্যায় সফল হলো- বঙ্গবন্ধু | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আমার স্বপ্নের প্রথম পর্যায় সফল হলো- বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবেগাপ্লুত কণ্ঠে ঘোষণা করছেন যে, তার সোনার বাংলায় যেদিন অত্যাচার ও শোষণ মুক্ত সমাজ কায়েম হবে সে দিন তার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন সফল হবে। শাসনতন্ত্র বিলের ওপর ১৫ দিনব্যাপী বিতর্কের সমাপ্তি টেনে জাতির পিতা সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, শাসনতন্ত্র যা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সূচনা করেছে। শাসনতন্ত্র পাসের সাথে সাথে তার স্বপ্নের প্রথম পর্যায়ও সফল হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, লাখ লাখ লোকের রক্ত ও অশ্রুতে লিখিত এবং দীর্ঘ দিনের সগ্রামের ফসল এই শাসনতন্ত্র আগামি ১৬ ডিসেম্বর-সাড়ে সাত কোটি বাঙালির স্বাধীনতা লাভের দিন থেকে বলবৎ হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে, তার দল জাতির কাছে প্রদত্ত পবিত্র প্রতিশ্রুতি পালনের জন্যই মাত্র ১০ মাস সময়ের মধ্যে এই শাসনতন্ত্র প্রদান করলো। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, দেশে বিরাজমান সমস্যা সমূহের সমাধান সংবিধানের ওপর নির্ভরশীল নয়। বরং একে সুষ্ঠুভাবে কার্যকরী করার মধ্যেই এর সমাধান নিহিত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, দেশের সংবিধান হচ্ছে নিছক একটি দলিল। যার মধ্যে বিশেষ কিছু মৌলিক নীতি বিবৃত হয়ে আছে। আর পার্লামেন্টের দায়িত্ব হচ্ছে দেশ শাসনের উদ্দেশ্যে সেই নীতিমালার আলোকে আইন প্রণয়ন করা। সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষা, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এই চারটি রাষ্ট্রীয় নীতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দানকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, শুধু চড়া গলায় বক্তৃতা করে দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এই সংবিধানের কোনো কোনো সমালোচক এটাই অনুসরণ করেছেন বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, আমার দল সমাজতান্ত্রিক নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে একটা শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েমে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। আর এই নীতি অনুসরণ করেই আমরা ব্যাংক, বীমা, প্রধান প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি শোষণের সূত্রগুলোই রাষ্ট্রায়ত্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজতন্ত্র বিদেশ থেকে আমদানি করা সম্ভব নয়। সমাজতন্ত্র সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন সোভিয়েত রাশিয়া ও গণচীনের সমাজতন্ত্রের মধ্যে বহু পার্থক্য ও ভিন্নমত বিরাজিত। ঠিক এমনিভাবেই যুগোশ্লাভিয়া, রোমানিয়া ও অন্যান্য পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে যে সমাজতন্ত্র কায়েম হয়েছে তা এক ও অভিন্ন নয়। এসব দেশগুলো নিজ নিজ দেশের সমস্যা ও প্রয়োজনের সাথে খাপ খাইয়ে নিজস্ব ধারায় সমাজতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছে। অনুরূপভাবে বাংলাদেশকেও তার নিজ দেশের সমস্যা ও প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে তার নিজস্ব পদ্ধতির সমাজতন্ত্র উদ্ভাবন করতে হবে।১২

রেফারেন্স: ৪ নভেম্বর ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ