আবেদন নাকচ
ঢাকা হাইকোর্টের এক বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বিধির ৩২ দফাবলে জনাব তফাজ্জল হােসেন ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান, জনাব তাজুদ্দিন আহমদ ও জনাব খােন্দকার মােশতাকের আটক আইনসঙ্গত বলিয়া অভিমত প্রকাশ করিয়া উক্ত ব্যক্তিদের পক্ষ হইতে তাহাদের বিরুদ্ধে প্রদত্ত আটকাদেশ চ্যালেঞ্জ করিয়া পেশকৃত আবেদনপত্রসমূহ নাকচ করিয়া দিয়াছেন।
সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ উক্ত বিধিবলে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জনাব নুরুল ইসলাম চৌধুরীর আটক অবৈধ বলিয়া ধারণা করিয়া তাহার পক্ষ হইতে আটককৃত হেবিয়াস কর্পাস আবেদনটি মঞ্জুর করিয়াছেন।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযােগ্য, জনাব তফাজ্জল হােসেন, জনাব শেখ মুজিবর রহমান, জনাব তাজুদ্দিন, জনাব মােশতাক ও জনাব নুরুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রতিরক্ষা বিধির ৩৫ ধারা মােতাবেক গ্রেফতার করা হয় এবং বিভিন্ন জেলে আটক রাখা হয়।
উপরােক্ত ব্যক্তিদের পক্ষ হইতে হাইকোর্টে পৃথক পৃথক রীট ও হেবিয়াস কর্পাস আবেদন পেশ করিয়া সংশ্লিষ্ট আটকাদেশ ও উহার ভিত্তিতে উপরােক্ত নেতৃবৃন্দের আটকের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়।
আবেদনকারীরা উপরােক্ত ব্যক্তিদের আটকের বিরুদ্ধে অভিযােগ করেন যে, তাহাদের আটক অবৈধ ও উদ্দেশ্যমূলক। কেননা উপরােক্ত ব্যক্তিরা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের কর্মকর্তা ও সমর্থক বিধায় তাহাদের অযথা হয়রানি করার উদ্দেশ্যে প্রতিরক্ষা বিষয়ক কোন কারণ ব্যাতিরেকেই তাহাদের আটক করা হইয়াছে।
তাছাড়া তাহাদের বিরুদ্ধে প্রদত্ত আটকাদেশ অনিশ্চিত ও প্রাদেশিক সরকার তথা ঢাকার ডেপুটী কমিশনারের এখতেয়ার বহির্ভূত।
আবেদনকারীদের পক্ষ হইতে অভিযােগ করা হয় যে, প্রতিরক্ষাবিধি মােতাবেক শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার উপরােক্ত বিধি মােতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করার। অধিকারী। প্রতিরক্ষাবিধি সম্বন্ধীয় ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারের হস্তে অর্পন করার অধিকারী নহেন। এবং অপরপক্ষে প্রাদেশিক সরকার ইহার কর্মচারীদের হস্তে উপরােক্ত ক্ষমতা হস্তান্তর করিতে আইনত অপরাগ, সেহেতু ডেপুটি কমিশনারের আদেশের ভিত্তিতে আবেদনকারীদের আটক অবৈধ। তাছাড়া বিষয়গত সন্তুষ্টির উপর আবদেনকারীদের আটকের বৈধতা নির্ভরশীল এবং উক্ত। সন্তুষ্টির প্রশ্ন আদালতের বিচার্য বিষয়।
সরকারের পক্ষ হইতে উপরােক্ত অভিযােগসমূহের বিরুদ্ধে বলা হয় যে, আবদেনকারীদের বিরুদ্ধে সংগৃহীত আপত্তিকর বিষয়সমূহের পরিপ্রেক্ষিতে আটকের আদেশসমূহের প্রদত্ত হওয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক মনােভাব সম্পর্কে যে অভিযােগ করা হইয়াছে, তাহা সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন।
উপরােক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জারিকৃত আদেশসমূহ অনিশ্চিত যা এখতেয়ার বহির্ভূত নহে।
বিচারপতি জনাব বি. এ. সিদ্দিকী, বিচারপতি জনাব এম. আর. খান, বিচারপতি জনাব সালাউদ্দিন ও বিচারপতি জনাব সায়েম সন্তুষ্টি সম্পর্কে বলেন যে, উহা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মানসিক সন্তুষ্টির উপর নির্ভরশীল এবং সেই সন্তুষ্টির প্রশ্নটি সংশ্লিষ্ট আইনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের বিচার্য বিষয় নহে। তাছাড়া উপরােক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে হাইকোর্টে যে সমস্ত প্রমাণ পেশ করা হইয়াছে উহার ভিত্তিতে আটক কোনক্রমেই অবৈধ নহে। আবেদনকারীদের অন্যান্য অভিযােগ যুক্তিহীন বলিয়া উপরােক্ত চারিজন বিচারপতি মত প্রকাশ করেন।
Reference: আজাদ, ১০ আগস্ট ১৯৬৬