You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.05.12 | দেশরক্ষা আইন প্রয়ােগের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

দেশরক্ষা আইন প্রয়ােগের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন

দেশরক্ষা আইনবলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবর রহমান ও দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের নিন্দা করিয়া পূর্ব পাকিস্তান। মােছলেম লীগের (কাউন্সিল) সাধারণ সম্পাদক জনাব সফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি খাওয়াজা খায়েরউদ্দিন এবং যুগ্ম-সম্পাদক জনাব আতাউল হক খান একটি যুক্ত বিবৃতিতে অভিযােগ করেন যে, সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য দেশরক্ষা আইন ব্যবহার করিতেছেন।
বিবৃতিতে তাহারা বলেন যে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করিবার জন্য আমরা দেশরক্ষা আইন প্রয়ােগের বিরুদ্ধে। দেশের স্বাভাবিক আইন রহিয়াছে, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে যদি সত্যিকার কোন অপরাধের অভিযােগ করা হয় তাহা হইলে তাহাদের প্রকাশ্য আদালতে বিচার করা হােক।
যুক্ত বিবৃতিতে তাঁহারা আরও বলেন, আমাদের দল প্রথমেই শেখ মুজিবর রহমানের ৬-দফার কয়েকটি বিশেষ দিক সম্পর্কে বিরুদ্ধমত জ্ঞাপন করিয়াছিল। আমরা বিশ্বাস করি যে, দেশের জনসাধারণ এবং বিশেষ করিয়া বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় ভালাে ও মন্দের পার্থক্য নির্ণয় করিতে সক্ষম।
প্রাদেশিক কাউন্সিল লীগের নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন যে, সরকারী দল প্রথমে শেখ মুজিবর রহমানের ৬-দফার বিরুদ্ধে কোন কথা বলেন নাই বরং ৬দফাকে প্রচার করিয়াছেন। তাহার পর হঠাৎ তাহারা গৃহযুদ্ধ’ ও অস্ত্রের ভাষা প্রয়ােগের হুমকি প্রদর্শন করিলেন কাউন্সিল লীগের নেতৃবৃন্দ সরকারী দলের এই কাৰ্য্যকে ‘কৌতুকপ্রদ’ বলিয়া অভিহিত করেন।
প্রাদেশিক কাউন্সিল মােছলেম লীগের কর্মকর্তাগণ প্রদত্ত বিবৃতিতে বলেন, অনেকে মনে করেন, সরকার পশ্চিম পাকিস্তানে রাজনৈতিক পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ৬দফার সুযােগ গ্রহণ করিয়াছিলেন।
সেই উদ্দেশ্য হাসেলের পর এখন সরকার আওয়ামী লীগের আন্দোলনকে দমন করিবার জন্য দেশরক্ষা আইন প্রয়ােগ করিতেছেন। তাহারা বলেন যে, এই দমননীতি সরকারের সুবিধা হইতে অসুবিধাই সৃষ্টি করিবে।
বিবৃতিতে তাহারা অবিলম্বে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে মুক্তিদান করিয়া জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলিকে ৬-দফা কাৰ্যসূচী ও আওয়ামী লীগের কাৰ্যকলাপের উপর রায় প্রদানের সুযােগদানের জন্য সরকারের নিকট আবেদন জানান। বিবৃতির পরিশেষে প্রাদেশিক কাউন্সিল লীগের নেতৃবৃন্দ সরকারের নিকট পুনরায় দেশরক্ষা আইনে গ্রেপ্তারকৃত মােছলেম লীগ ও পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দকে মুক্তিদানের দাবী জানান।

জামায়াতে ইসলামী
পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর মওলানা আবদুর রহিম গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে দেশরক্ষা আইনবলে গ্রেপ্তার করিয়া সরকার চরম নিবুদ্ধিতার ও অবিমৃষ্যকারিতার পরিচয় দিয়াছেন। দেশরক্ষা আইনের সাহায্যে রাজনৈতিক বিরােধিতার প্রতিশােধ গ্রহণ করা সব সময়েই ও প্রতিবাদযােগ্য।
বিবৃতিতে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ও পশ্চিম পাকিস্তানের কাউন্সিল মােছলেম লীগ নেতৃবৃন্দকে অবিলম্বে মুক্তিদান করিয়া জনগণকে সকল প্রকার প্রােগ্রাম শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যাচাই করার অবাধ সুযােগদানের জন্য জরুরী অবস্থা প্রত্যাহারের দাবী জানান।
জাতীয় পরিষদের সদস্য জনাব এ, বি, এম, নুরুল ইসলাম, প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জনাব আবদুল মােমেন এবং ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কর্মকত্তাগণ পৃথক বিবৃতি মারফত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করার তীব্র নিন্দা করিয়া অবিলম্বে তাঁহাদের মুক্তি দানের দাবী জানাইয়াছেন।

Reference: আজাদ, ১২ মে ১৯৬৬