দু’জন সদস্যের ওয়াক আউট, শাসনতন্ত্র বিলের ১৭ টি অনুচ্ছেদ গৃহীত
বন্দর ও জাহাজ চলাচল দফতরের মন্ত্রী জনাব এম এ জি ওসমানী সহ ক্ষমতাধীন আওয়ামী লীগ। দলীয় সদস্যদের প্রস্তাবক্রমে ৯ টি সংশোধনীসহ ১৫৩ অনুচ্ছেদ বিশিষ্ট শাসনতন্ত্র বিলের ১৭টি অনুচ্ছেদ গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়। ধারাবাহিকভাবে শাসনতন্ত্র বিল আলোচনার প্রথম দিনে পরিষদের অধিবেশন ২ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় স্থায়ী হয়। এইদিন পরিষদে বিরোধীদলীয় একমাত্র সদস্য শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ৭টি সংশোধনী প্রস্তাব সহ মোট ৮টি সংশোধনী প্রস্তাব পরিষদ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ৪টি সংশোধনী বৈধতার প্রশ্নে নাকচ করে দেওয়া হয়। অপর ৩টি প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত উত্থাপন করা হয়নি। অষ্টম সংশোধনীটি হচ্ছে, স্বতন্ত্র সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার। পরিষদের চলতি অধিবেশনে প্রথম ২ জন সদস্য ওয়াকআউট করেন। এরা হচ্ছেন ন্যাপের একমাত্র সদস্য শ্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, ও পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্দলীয় সদস্য শ্রী এম এন লারমা। শ্রী সেনগুপ্ত ওয়াকআউটের ২ মিনিট এবং শ্রী লারমা আধ-ঘণ্টা পরে পরিষদে ফিরে আসেন। সকালে পরিষদের পুনরাধিবেশনে কিছুক্ষণের মধ্যে শ্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত একটি সংশোধনী উত্থাপন করেন। কিন্তু এই সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক অনুচ্ছেদ ইতোপূর্বে গৃহীত হয়ে যাওয়ায় স্পীকার শ্রী গুপ্তের সংশোধনীটি বৈধতার প্রশ্নে নাকচ করে দিলে উক্ত সদস্য পরিষদ থেকে ওয়াকআউট করেন। শাসনতন্ত্র বিলের প্রথম অনুচ্ছেদে শ্রী সেনগুপ্ত একটি ধারা যোগ করার জন্য সংশোধনী উত্থাপন করা হয়েছিল। শাসনতন্ত্র বিলের প্রথম অনুচ্ছেদটি হচ্ছে, প্রজাতন্ত্রের প্রকৃতি কি হবে তৎসম্পর্কিত। এর কিয়কাল পরেই পরিষদ দেশের নাগরিকদের বাঙালি হিসাবে আখ্যায়িত করে জনাব আবদুর রাজ্জাক ভূঁইয়ার একটি সংশোধনী গ্রহণ করলে শ্রী লারমা এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বলেন, আমাদের যে সুস্পষ্ট স্বাতন্ত্র্য রয়েছে এর ফলে তার বিলোপ ঘটবে। এই সংশোধনীটি বিলের ভাষার উন্নয়ন রাষ্ট্রীয় মৌলনীতির সাথে বিলের অধিকতর সংগতি রক্ষার জন্য গ্রহণ করা হবে।
সৈয়দ নজরুল : শ্রী লারমার ওয়াকআউটের পর বক্তৃতা করতে উঠে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, পাকিস্তান সরকার উপজাতীয়দের জন্য যে বিশেষ মর্যাদার ব্যবস্থা করেছিল তার উদ্দেশ্যে তাদের স্বার্থ রক্ষা ছিল না বরং তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু এখন বাংলাদেশ সৃষ্টির পর পরিস্থির আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। শিল্পমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর উপজাতীয় এলাকার জনগণ আর দ্বিতীয় শ্রেণির নন। দেশের স্বাধীনতার জন্য অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকের ন্যায় তারাও কাধে কাধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন ও একই রূপ দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম আরও বলেন যে, অতীতে উপজাতীয় এলাকাকে উপেক্ষা করার ফলে তাদের বিশেষ কিছু সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তনি আমলে সৃষ্ট উপজাতীয় জনগণের সমস্যার সমাধান ও তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। শিল্পমন্ত্রী অনুন্নত এলাকা উন্নয়নের জন্য শাসনতন্ত্রের যে বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে, তার উল্লেখ করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে এমন কিছু না করার জন্য আবেদন করেন। তিনি শ্রী লারমার প্রতি পরিষদে ফিরে আসার জন্যও আবেদন জানান। শ্রী লারমা এর কিছুক্ষণ পরেই পরিষদে ফিরে আসেন।১২৬
রেফারেন্স: ৩১ অক্টোবর ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ