রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ব্যক্তিমালিকানায় ফিরিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন অবান্তর- সৈয়দ নজরুল ইসলাম
শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ পুনরায় ব্যক্তিগত মালিকদের নিকট হস্তান্তর করার কোনো প্রশ্নেই উঠে না। রবিবার স্থানীয় কারিগরি মিলনায়তনে আয়োজিত চটকল শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিনিধি সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, পুরাতন মালিকদের হাতেই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকানা তুলে দেওয়া হবে। এটা একটা ভিত্তিহীন গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, মূলতঃ পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার মোটা অংশ অর্জিত হয়। যেহেতু সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক কর্মসূচির নিশ্চয়তা বিধানে চটকলসমূহে উৎপাদন যথাসম্ভব বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, শিল্পাঞ্চলে যে অসন্তোষ রয়েছে তা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে পরস্পর আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করে নিতে হবে। সমাজতন্ত্রের শক্ররা শিল্পাঞ্চলের আঞ্চলিকতার বিভেদ সৃষ্টি করে উৎপাদন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক সমাজকে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে এই বিদ্বেষ প্রসুত মনোভাব দূর করতে হবে। সৈয়দ নজরুল প্রকাশ করেন, আমাদের ৭৪টি চটকলের মধ্যে মাত্র ২টি চটকল আনুষঙ্গিক কারণে বন্ধ রয়েছে এবং সে ২টিও খুব শীঘ্রই চালু করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, খুচরা যন্ত্রপাতি ও শিল্প সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অসুবিধা দূর করার জন্য সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। শিল্পমন্ত্রী একটি আমেরিকান পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমালোচনা করে বলেন, আমেরিকা পুঁজিবাদী মহল বাংলাদেশের অর্থনীতির অপব্যাখ্যা প্রচার করছে। আমাদের শিল্প ব্যবস্থায় ব্যক্তি মালিকানা অভিশাপ হতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে সমাজতন্ত্র অর্থনীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমস্ত আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে হবে।
চটকল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা সাইয়েদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি জনাব মোঃ শাহাজাহান বলেন, শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া প্রশ্নের সরকারি মহলের সাথে আলাপ-আলোচনা বার বার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। ন্যায়সংগত দাবি আদায়ের জন্য আবার আমাদের আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন,শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসকদের দুর্নীতি আজ শ্রমিক সমাজকে পুনরায় আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। তিনি অভিযোগ করেন, পুরাতন শিল্প মালিকদেরই কেবল পদবী বদল পূর্বক প্রশাসক নিযুক্ত করে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানকে অচল করে দেওয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চলছে। মালিকরাই সাধারণ শ্রমিকদের উৎপাদন ব্যাহত রাখায় উস্কানি দিয়ে আসছে। তিনি অভিযোগ করেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যুৎ বিভ্রাটজনিত কারণে শিল্প ইউনিটগুলোর ৯০ লক্ষ টাকার ক্ষতি স্বীকার করে নিতে হয়েছে।১১৯
রেফারেন্স: ২৯ অক্টোবর ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ