You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.10.25 | সমাজতন্ত্র কায়েমের অনুকূলে সংবিধানে যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

সমাজতন্ত্র কায়েমের অনুকূলে সংবিধানে যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে

জনাব আসাদুজ্জামান খান বুধবার গণপরিষদের অধিবেশনে খসড়া সংবিধানের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বলেন যে, বাংলাদেশের খসড়া সংবিধানে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে ব্যবস্থা রয়েছে তা সমাজতান্ত্রিক দেশের সংবিধানে প্রদত্ত সমাজতন্ত্রের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সমাজতন্ত্র কায়েমের অনুকূলে সংবিধানে যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন যে, সমাজতন্ত্রের প্রয়োজনে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে, সকালে মাননীয় স্পীকার জনাব মুহম্মদুল্লাহর সভাপতিত্বে গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হলে জনাব আসাদুজ্জামান খান খসড়া সংবিধানের সমর্থনে তার বক্তৃতা পেশ করার মাধ্যমে গতকালের আলোচনার সূত্রপাত করেন। তাছাড়া এইদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্দলীয় সদস্য মি. মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাও সাধারণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। জনাব আসাদুজ্জামান খান তার দীর্ঘ ভাষণে খসড়া সংবিধান সম্পর্কে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাব দেন এবং তার বিভিন্ন তফসিল, অনুচ্ছেদ, ধারা-উপধারার বিশ্লেষণ করেন। তিনি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটিরও একজন সদস্য। জনাব আসাদুজ্জামান খান তার ভাষণে বলেন, সংবিধানে সমাজতন্ত্র কার্যকরী করার কোনো ব্যবস্থা নেই। তিনি এই প্রসঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মান ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক এবং অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশের সংবিধানের উল্লেখ করে বলেন যে, এসব দেশের সংবিধানেও সমাজতন্ত্র মূলনীতি হিসাবে রয়েছে। কীভাবে এবং কি পন্থায় সমাজতন্ত্র অর্জন করা যাবে তা সংবিধানে লেখা থাকার কথা নয়। তবে সমাজতন্ত্রের পথে কোনো অন্তরায় সৃষ্টি হতে পারে এমন কোনো মৌলিক বিধান এই খসড়া সংবিধানে নাই। তিনি বলেন যে, ভবিষ্যৎ সংসদ সমাজতন্ত্র কার্যকরীকরণ সম্পর্কিত আইন প্রণয়ন করতে পারে। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কতিপয় দেশের নির্দিষ্ট পন্থা অবলম্বনের প্রবক্তাদের বিরোধীতা করে বলেন, আমাদের নিজস্ব চিন্তা ধারার ভিত্তিতেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। যাদের নিজস্ব চিন্তাধারা নাই তারাই অন্যের দেশের সমাজতন্ত্র আমদানি করতে চায়। তিনি এই প্রসঙ্গে রাশিয়া ও চীনের বিরোধীদের উল্লেখ করে বলেন, এক দেশ আর এক দেশের সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করে নাই। তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব চিন্তাধারা অনুযায়ী সমাজতন্ত্র কায়েম করবো। আমরা রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র চাই না। জনগণের ওপর এক জনের চিন্তাধারা জোর করে চাপিয়ে দিতে চাই না। শান্তিপূর্ণ ভাবে জনগণের রায়ের দ্বারা জনগণের রায় প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন যে, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে এক এক দেশে এক এক ধারায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মৌলিক অধিকারের প্রসঙ্গে তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বের সকল দেশে জনসাধারণ অবাধ অধিকার ভোগ করে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অধিকার স্বীকৃত, তা আমাদের সংবিধানে রয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্যই সীমিত অধিকার সকল দেশে স্বীকৃত।
তিনি এই প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পশ্চিম জার্মানের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেন। তিনি সমালোচককে তার নিজের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেন নাই এমন সব আশা-আকাঙ্ক্ষা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্তি না করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন যে, এমন কোনো মৌলিক অধিকার নাই যা বিধিনিষেধ ধারা সীমাবদ্ধ নাই। সোভিয়েত ইউনিয়নের মৌলিক অধিকারের বিধিনিষেধের উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, বাংলাদেশ তিনি এইরকম বিধিনিষেধ গ্রহণ করবে না। সোভিয়েত ইউনিয়নে কেবল একটি রাজনৈতিক দলের প্রচার করা হয়ে থাকে। যেহেতু আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী তাই আওয়ামী লীগ কেবল নিজের মতবাদই প্রচার করতে চায় না। তিনি সমাজতান্ত্রিক দেশের কি কি অধিকার স্বীকার করা হয়েছে এবং কি কি অধিকার নাই, বিচার করে দেখার জন্য সমালোচকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন গণতান্ত্রিক হোক কিংবা সমাজতান্ত্রিক হোক এমন কোনো দেশ নাই যেখানে মৌলিক অধিকার আইনের বিধি নিষেধ দ্বারা সীমাবদ্ধ হয় নাই।১০৩

রেফারেন্স: ২৫ অক্টোবর ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ