পুলিশের গুলিতে ১০ ব্যক্তি নিহত
ঢাকা, ৭ই জুন—আওয়ামী লীগ কর্তৃক আহূত হরতাল ৭-৬-৬৬ তারিখে অতি প্রত্যুষ হইতে পথচারী ও যানবাহনে ব্যাপক বাধা সৃষ্টির মাধ্যমে সংগঠিত করা। হয়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছােকরা ও গুন্ডাদের লেলাইয়া দেওয়া হয়। ই পি আর টি সি বাসগুলিতে ইট-পাটকেল ছোড়া হয় এবং টায়ারের পাম্প ছাড়িয়া দিয়া সর্বপ্রকার যানবাহনে অচলাবস্থা সৃষ্টি করা হয়। নিরিহ জনসাধারণ ও অফিস যাত্রীদের অপমান ও হয়রান করা হয়। হাইকোর্টের সম্মুখে তিনটি গাড়ী পােড়াইয়া দেওয়া হয়। পুলিশ কার্জন হল, বাহাদুর শাহ পার্ক ও কাওরান বাজারের নিকট গুন্ডাদের বাধা দান করে এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করিয়া তাহাদিগকে ছত্রভঙ্গ করিয়া দেয়।
তেজগাঁওয়ে ২-ডাউন চট্টগ্রাম মেইল তেজগাঁও রেল ষ্টেশনের আউটার সিগন্যালে আটক করিয়া লাইনচ্যুত করা হয়। ট্রেনখানা প্রহরা দানের জন্য একদল পুলিশ দ্রুত তথায় গমন করে। জনতা তাহাদের ঘিরিয়া ফেলে এবং তুমুলভাবে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। ফলে বহু পুলিশ কর্মচারী আহত হয়। যখন পুলিশ জনতার কবলে পড়িয়া যাওয়ার উপক্রম হয় তখন আত্মরক্ষার জন্য তাহারা গুলীবর্ষণ করে। ফলে ৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
পূর্বাহ্নে ১০ ঘটিকায় প্রায় ৩শত উচ্ছঙ্খল জনতা কর্তৃক তেজগাঁওস্থ ল্যান্ড রেকর্ড ও সার্ভে ডিরেক্টরের অফিস আক্রান্ত হয়। জনতা তুমুলভাবে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। ফলে অফিসের যথেস্ট ক্ষতি সাধিত হয়।
জনতা অতঃপর সেটেলমেন্ট প্রেসের দিকে অগ্রসর হইয়া প্রিন্টিং মেশিনসমূহের দারুন ক্ষতি সাধন করে। আক্রমণের সময় প্রেসের তিনজন কর্মচারী আহত হয়।
নারায়ণগঞ্জে এক উচ্ছঙ্খল জনতা সকাল ৬-৩০ মিনিটের সময় গলাচিপা রেলওয়ে ক্রসিং-এর নিকট ঢাকাগামী ট্রেন আটক করে। পরে জনতা নারায়ণগঞ্জগামী ৩৪ নং ডাউনট্রেন আটকাইয়া উহার বিপুল ক্ষতিসাধন ও ড্রাইভারকে প্রহার করে। জনতা জোর করিয়া যাত্রীদের নামাইয়া দেয়। যাত্রীদের উদ্ধারের জন্য আগত একটি পুলিশ দল আক্রান্ত এবং বহুসংখ্যক পুলিশ কর্মচরী আহত হয়। পুলিশ দল লাঠিচার্জের সাহায্যে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করিয়া দেয়। অতঃপর বন্দুক সহ মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এক জনতা নারায়ণগঞ্জ থানা আক্রমণ করিয়া দারুন ক্ষতি সাধন এবং বন্দুকের গুলিতে পুলিশ অফিসারদের জখম করে উচ্ছঙ্খল জনতা থানা ভবনে প্রবেশ করার পর পুলিশ আত্মরক্ষার্থ গুলীবর্ষন করার ফলে ছয় ব্যক্তি নিহত ও আরও ১৩ ব্যক্তি আহত হয়। ৪৫ জন পুলিশ আহত হন এবং তাহাদের মধ্যে কয়েকজনের আঘাত গুরুতর।
পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী জনাব এম এ জাহেরের মােটরগাড়ী ভস্মীভূত ও তাঁহার বাড়ী লুষ্ঠিত হয়। নারায়ণগঞ্জ ও চাষাড়ার মধ্যে রেলওয়ে সিগন্যালিং লাইন। বিচ্ছিন্ন করিয়া ফেলা হয়। টঙ্গীতে বিভিন্ন মিলের শ্রমিকেরা ধর্মঘট পালন করে এবং একটি শােভাযাত্রা বাহির করে। কাওরান বাজারের এক উচ্ছঙ্খল জনতা একজন সার্জেন্টকে প্রহার ও তাঁহার স্কুটারের ক্ষতিসাধন করে এবং রেলওয়ে ক্রসিং-এর নিকট একটি মালবাহী ট্রেন থামাইয়া দেয়।
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শ্রেণীর ছাত্ররা পিকেটিং করে এবং সেখানে আংশিক ধর্মঘট পালিত হয়। ঢাকা হলও বাহিরের লােকদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। পুলিশ ও ই পি আর দ্রুত ঘটনাস্থলে উপনীত হইয়া পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে।
দুপুরে আদমজী, সিদ্ধিরগঞ্জ ও ডেমরা এলাকার শ্রমিকগণ ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করিয়া শােভাযাত্রাসহকারে ঢাকা অভিমুখে অগ্রসর হইতে থাকে। ঢাকা নগরীর দুই মাইল দূরে ইপিআর বাহিনীর একটি দল শােভাযাত্রার গতিরােধ করে। অপরাহ্নে এক জনতা গেন্ডারিয়ার নিকট একখানি ট্রেন আটক করে। চট্টগ্রামগামী গ্রীন এ্যারাে ও ঢাকা অভিমুখী ৩৩-আপ ট্রেনখানিকে অপরাহ্নের দিকে তেজগাঁও স্টেশনে আটক করা হয়। যাহা হউক, ট্রেন যােগাযােগ অল্পক্ষণ পরেই পুনরায় চালু করা হয়।
সন্ধ্যার পর একটি উচ্ছঙ্খল জনতা কালেক্টরেট ও পরে ষ্টেটব্যাংক আক্রমণ করে। রক্ষিগন জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য গুলীবর্ষণ করে।
বেলা ১১টায় ৫ বা ততােধিক ব্যক্তির একত্র সমাবেশ ও শােভাযাত্রা নিষিদ্ধ করিয়া ১৪৪ ধারা জারী করা হয়।
শহরের অন্যান্য স্থানে পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক ছিল।
আরও ১ ব্যক্তির মৃত্যু
ঢাকা, ৮ই জুন (এ, পি, পি)—অদ্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়া আসিয়াছে বলিয়া এক সরকারী প্রেসনােটে প্রকাশ।
পূর্ব পাকিস্তান সরকারের এই প্রেসনােটে বলা হয় যে, “কোনস্থানে কোন প্রকার উত্তেজনা, শান্তি ভঙ্গ হইতে পারে এ ধরনের কিংবা দুর্ভাগ্যজনক কোন। ঘটনা সংঘটিত হয় নাই।” ইহাতে উল্লেখ করা হয় যে, “সকল দোকানপাট খােলা ছিল এবং যানবাহন সাধারণভাবে চলাচল করিতেছিল।”
আরও বলা হয় যে, “গতকল্য পুলিশের গুলীবর্ষণের ফলে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাণত্যাগ করিয়াছে। প্রদেশের অন্যান্য অঞ্চলের অবস্থা স্বাভাবিক ও শান্ত রহিয়াছে।”
রেফারেন্স: সংবাদ, ৯ জুন ১৯৬৬