You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.06.28 | ছয়-দফাই হলাে নিম্নতম কর্মসূচী | কারাগারের রােজনামচা - সংগ্রামের নোটবুক

ছয়-দফাই হলাে নিম্নতম কর্মসূচী

ভাসানী সাহেবের রাজনৈতিক অসুখ খবরের কাগজ এসেছে। ভাসানী সাহেবের রাজনৈতিক অসুখ ভাল হয়ে গেছে। যখন গুলি চলছিল, আন্দোলন চলছিল, গ্রেপ্তার সমানে সমানে চলেছে তখন দেখলাম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আবার দেখলাম দুই তিন দিন পরে কোথায় যেতে ছিলেন পড়ে যেয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছেন। হঠাৎ অসুস্থ মানুষ আবার বাড়ির বাহির হলেন কি করে? যখন আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য কর্মীরা কারাগারে-এক নারায়ণগঞ্জে সাড়ে তিনশত লােকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরােয়ানা ঝুলছে, তখনও কথা বলেন না। আওয়ামী লীগ যখন জুলুম প্রতিরােধ দিবস পালন করল তখন একদল ভাসানীপন্থী প্রগতিবাদী (!) এই আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বলে সরকারের সাথে হাত ও গলা মিলিয়েছে। এখন তিনি হঠাৎ আবার সর্বদলীয় যুক্তফ্রন্ট করবার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন এবং নিজে ময়দানে নামবেন।
মওলানা সাহেব পরােক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে আইয়ুব খানকে সমর্থন করে চলেছেন। মওলানা সাহেবের সাথে যদি যুক্তফ্রন্ট করতে হয় তবে আইয়ুব সাহেবই বা কি অন্যায় করেছেন? মওলানা সাহেব তাে দেশের সমস্যার চিন্তা করেন না। বৈদেশিক নীতি নিয়ে ব্যস্ত। দেশে গণআন্দোলন বা দেশের জনগণের দাবি পূরণ ছাড়া বৈদেশিক নীতিরও কোনাে পরিবর্তন হতে পারে না। জনগণের সরকার কায়েম হলেই, জনগণ যে বৈদেশিক নীতি অবলম্বন করতে বলবে, নির্বাচিত নেতারা তাহাই করতে বাধ্য। ডিক্টেটর যখন দেশের শাসন ক্ষমতা অধিকার করেছে এবং একটা গােষ্ঠীর স্বার্থেই বৈদেশিক নীতি ও দেশের নীতি পরিচালনা করেছে তার কাছ থেকে কি করে এই দাবি আদায় করবেন আমি বুঝতে পারছি না।
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যখন তাদের স্বায়ত্তশাসনের দাবি, খাদ্য, রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে তখন পিছন থেকে ছুরিকাঘাত করে এখন এসেছেন যুক্তফ্রন্ট করতে! আওয়ামী লীগের প্রায় সকল নেতা ও কর্মীই কারাগারে বন্দি। কেহ কেহ আত্মগােপন করে কাজ করছে, এখন যে কয়েকজন বাইরে আছে তারা কিছুতেই এদের সাথে যােগদান করতে পারে না। আর ছয়-দফা দাবি ছেড়ে দিয়ে কোনাে নিম্নতম কমূসূচি মেনে নিতে পারে না। ছয়-দফাই হলাে নিম্নতম কর্মসূচী। কোনাে আপােষ নাই। জনগণ যখন এগিয়ে এসেছে তখন দাবি আদায় হবেই। আওয়ামী লীগ সংগ্রাম করে যাবে। জনগণকে আর ধোঁকা দেওয়া চলবে না। অনেক জগাখিচুড়ী পাকানাে হয়ে গেছে। আর না। ভাসানী সাহেব এগিয়ে যান আইয়ুব সাহেবের দল নিয়ে। এখন। তাে তিনি সুখেই আছেন, আর কেন মানুষকে ধোকা দেওয়া? আওয়ামী লীগ বা তার নেতারা যদি ছয়-দফা দাবি ত্যাগ করে আপােষ করতে চান তারা ভুল করবেন। কারণ তাহলে জনগণ তাদেরও ত্যাগ করবে।

রেফারেন্স: কারাগারের রােজনামচা, ২৮ জুন, ১৯৬৬