স্বাধীনতা নস্যাতের চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব জিল্লুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা নস্যাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্যে সরকারের কাছে তিনি বলেন, চীনকে ক্ষমা করা গেলেও চীনের বাঙালি এজেন্টদের কোনো মতেই ক্ষমা করা যায় না। জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে চীনের ভেটো প্রয়োগের প্রতিবাদে গতকাল রোববার পল্টন ময়দানে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জনসভায় জনাব জিল্লুর রহমান বলেন, মওলানা ভাসানী ও তার দলের মাও পন্থীরা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে বলছে, এখানে ভারতীয় সৈন্য এখনো রয়েছে। শান্তি, শৃঙ্খলা, আইন-কানুন বলতে এখানে কিছুই নেই। তিনি বলেন, এসব মিথ্যা প্রচারণাকারী বিশ্বাসঘাতকদের কঠোর হস্তে দমন করা হলে জনগণ আনন্দিত হবে। তিনি বলেন, চীন সর্বহারা নিঃস্ব মানুষের পাশে বললেও সবসময়ই দেখা গেছে তারা আইয়ুব ও ইয়াহিয়াকে সমর্থন করে সাড়ে সাত কোটি মানুষের বিরোধীতা করেছে।
গুলি করে হত্যার আইন প্রণয়ন করুন : চোরাচালান বন্ধের জন্যে তিনি সরকারের প্রতি অনতিবিলম্বে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত একেবারে বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, চোরা চালান বন্ধের জন্যে সীমান্তে কাফু জারি করতে হবে এবং চোরাচালানীকে দেখা মাত্রই গুলি করে হত্যা করার আইন সরকারকে পাশ করতে হবে। শুধু চোরাচালানী নয়, যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় তাদেরও গুলি করে হত্যা করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার যেহেত গণতান্ত্রিক তাই হয়ত গুলি করার মতো কঠিন সাজা দিতে কিছুটা দ্বিধাবোধ করছেন। সরকারকে অভয় দিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমনের জন্য অবশ্যই কঠিন হতে হবে। এতে জনগণের সমর্থন সরকার পাবেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অগ্নি মূল্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার একথা স্বীকার করছেন। পূর্বেকার সরকারগুলোর মতো অস্বীকার করছেন না। এবং সেই সরকার গুলোর সাথে বর্তমান সরকারের এখানেই পার্থক্য। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য রোধের ব্যাপারে কোনো রাজনৈতিক দল এ পর্যন্ত সরকারকে সাহায্য করার জন্য কোনো সুপারিশ নিয়ে আসে নি। তারা পক্ষান্তরে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নবলব্ধ স্বাধীনতা নস্যাতের ষড়যন্ত্র করছে। বস্ত্র সংকট দূর করার জন্যে তিনি সরকারের কাছে আমদানি করা কাপড় রেশন কার্ডের মাধ্যম ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে বিতরণ করার সুপারিশ করেন। তাহলে কাপড়ের দাম কমে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কাপড় আমদানি করলেই চলবে না তা বণ্টনের সুষ্ঠ ব্যবস্থাও করতে হবে। তিনি সরকারের কাছে সমস্ত জিনিসের মূল্য বেঁধে দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, জিনিসের অভাব আছে এই কথা ঠিক নয়। কারণ বেশি পয়সা দিলে সবই পাওয়া যায়। সুষম ব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে ধনী-গরীবের পার্থক্য দূর করে শ্রেণিহীন-শোষণহীন সমাজ তথা কৃষক-শ্রমিক রাজ কায়েম ত্বরান্বিত করার জন্য সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।৩৬
রেফারেন্স: ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ