শাসনতন্ত্রে মৌলিক অধিকারের গ্যারান্টি থাকবে- সৈয়দ নজরুল ইসলাম
চট্টগ্রাম। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঘোষণা করেন যে, দেশের ভবিষ্যত শাসনতন্ত্রে কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া মৌলিক অধিকারের গ্যারান্টি থাকবে। তিনি বলেন, কেবল মাত্র যেসব বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রত্যক্ষভাবে বাধা হয়ে দাঁড়াবে সেসব ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছাড়া ভবিষ্যত শাসনতন্ত্রের জনগণের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে। তিনি বলেন, যেহেতু সমাজতন্ত্র পরস্পর বিরোধী না হয়ে পরস্পরের পরিপূরক সেই কারণেই মৌলিক অধিকারে কিছু সংকোচনের প্রয়োজন। আজ সকালে এখানে গভর্নমেন্ট হাউসে রাজনৈতিক নেতৃবর্গ, রাজনৈতিক কর্মী, শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রেণির জনগণের এক সমাবেশে বক্তৃতাকালে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী একথা ঘোষণা করেন। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী একথা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেন যে জনগণের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করা যাবে না। তবে মনে রাখতে হবে যে, আমাদের লক্ষ্য হলো দেশে শোষণ মুক্ত এক সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গড়ে তোলা। এক শ্রেণির লোক হেবিয়াস কর্পাস সম্পর্কীত অধিকার সংকোচনের অভিযোগ করেছেন। সে সম্পর্কে তিনি বলেন, পাকিস্তানি হানাদারদের দালাল দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারকে সাহায্য করার জন্যেই এটা করা হয়েছে। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে দেশপ্রেমিক জনগণের কোনো ক্ষতি হবে না এবং এমনকি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বা বিরোধীদের ক্ষেত্রেও এসব প্রযোজ্য নয়। তিনি বলেন, অনেকেই যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি আসলে আদৌ তা নয়। এতে কেবল মাত্র পাকিস্তান- দালাল ও পাকিস্তান সহযোগী দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, দেশ প্রেমিক নাগরিকদের এতে কোনো ক্ষতি হবে না। শ্রেণি সংগ্রামের স্লোগানদানকারী অতি বিপ্লবীদের সম্পর্কে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে একটি মাত্র শ্রেণিতে পরিণত করেছে। আর সেই শ্রেণি হলো ‘সর্বহারা শ্রেণি’, সুতরাং বাংলাদেশে শ্রেণি সগ্রামে আর কোনো অবকাশ নেই। তিনি বলেন, আমাদের সম্মুখে আজ একমাত্র কর্তব্য হচ্ছে আর কোনো শোষক শ্রেণি গড়ে না ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখা। তিনি বলেন, ব্যাংক-বীমা ও শিল্প জাতীয়করণের মাধ্যমে সরকার ইতোমধ্যেই কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ব্যাংক বীমা ও শিল্পের ব্যক্তিগত মালিকানা থেকেই দেশে পুঁজিবাদ ও শোষক শ্রেণি গড়ে ওঠে। কিন্তু বাংলাদেশে তার আর কোনো সুযোগ নেই। এসবই এখন সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীনে এবং এদিক থেকে আর কোনো হুমকির সম্ভাবনা নেই। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সরকারি নীতি ও কাজের সুস্থ ও গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, সরকারের নীতি ও গঠনমূলক সমালোচনা জনগণকে সরকারি কাজে উদ্বুদ্ধ করবে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে দেশের খাদ্য পরিস্থিতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণকে কঠোর ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। বর্তমান খাদ্য ঘাটতি কাটিয়ে উঠার জন্যে জনগণকে তিনি অধিক পরিমাণে গম গ্রহণে অভ্যস্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন এই জন্যেই যে সরকার সর্বাত্মক চালিয়েও বন্ধু দেশগুলো থেকে অধিক পরিমানে চাল সগ্রহ করতে পারেন নি। যা পাওয়া গেছে তা হলো ১০ লাখ টন গম ও মাত্র ৩ লাখ টন চাল। সুতরাং চালের চেয়ে আপাততঃ গমই বেশি পরিমাণে গ্রহণ। করতে হবে। তিনি বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধুদেশগুলো থেকে সংগৃহীত এইসব খাদ্য শস্য এসে পৌছবে। এবং এসব খাদ্যশস্য এসে পৌছুলেই দেশের খাদ্য পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে। বিপিআই পরিবেশিত এক খবরে উল্লেখ করা হয় যে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন গত সপ্তাহ থেকে খাদ্যশস্যের পরিবহন সরবরাহ দ্রুত ও জোরদার করার ফলে দেশের খাদ্য পরিস্থিতির ক্রমোন্নতি হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের হাতে বর্তমানে ৪ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে এবং আরো ১০ লাখ টন খাদ্যশস্য খুব শীগগিরই এসে পৌছবে। তিনি বলেন, জরুরি ভিত্তিতে ভারত থেকে কাপড় এবং অন্যান্য অত্যাবশকীয় সামগ্রী আনা হচ্ছে। আগামি দু’এক সপ্তাহের মধ্যে এসে পৌছবে বলে তিনি মনে করেন।৫
রেফারেন্স: ২ সেপ্টেম্বর ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ